একাকী ভ্রমণের প্রবণতা বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। নতুন দেশ, সংস্কৃতি ও মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার এই সুযোগ একদিকে যেমন আনন্দদায়ক, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকিও থাকে।
বিশেষ করে, অপরিচিত পরিবেশে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। এই ঝুঁকিগুলো কমাতে এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আরও নিরাপদ করতে কিছু গ্যাজেট বা যন্ত্রাংশ সাহায্য করতে পারে। নিচে এমন কয়েকটি গ্যাজেটের কথা আলোচনা করা হলো যা একাকী ভ্রমণকারীর জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে।
নিরাপত্তা বিষয়ক পরামর্শদাতা এবং ‘গার্লস ফাইট ব্যাক’ (Girls Fight Back)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিকোল স্নেল-এর মতে, “একাকী ভ্রমণে নিজের চারপাশের বিষয়ে সচেতন থাকা এবং ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়াটা খুব জরুরি।
অতিরিক্ত মনোযোগ ডিভাইসের দিকে থাকলে, অনেক সময় আমাদের আশেপাশের বিপদগুলো নজরে আসে না, যা অপরাধীদের সুবিধা করে দেয়।”
১. জরুরি অবস্থার জন্য পাওয়ার ব্যাংক (Power Bank):
বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যোগাযোগ রাখা থেকে শুরু করে দিকনির্দেশনা, টিকিট বুকিং, এমনকি জরুরি অবস্থার জন্য সাহায্য চাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও ফোনের মাধ্যমেই করা হয়।
তাই, ভ্রমণের সময় ফোনের চার্জ ফুরিয়ে গেলে বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি হালকা ও দ্রুত চার্জিং-এর পাওয়ার ব্যাংক (Power Bank) সঙ্গে থাকলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
২. স্মার্টওয়াচ (Smartwatch):
স্মার্টওয়াচ-এর (Smartwatch) মাধ্যমে আপনি হাতে ফোন না ধরেই জরুরি কল করতে পারেন, টেক্সট মেসেজ পাঠাতে পারেন, এমনকি লোকেশনও শেয়ার করতে পারেন। অনেক স্মার্টওয়াচে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন ফিচার থাকে, যেমন হার্ট রেট মনিটরিং এবং ফল ডিটেকশন।
ভ্রমণের সময় একা অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোনো দুর্ঘটনায় পড়লে এই ফিচারগুলো খুব কাজে আসে।
৩. স্মার্ট জুয়েলারি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ডিভাইস (Smart Jewelry & Personal Safety Device):
বর্তমান বাজারে স্মার্ট নেকলেস (Smart Necklace), ব্রেসলেট (Bracelet) ও স্মার্ট কি-চেইন (Key-chain) পাওয়া যায়। এগুলোতে একটি বিশেষ বাটন থাকে যা চাপলে আপনার পূর্বনির্ধারিত পরিচিতজনদের কাছে আপনার লাইভ লোকেশন (Live Location) চলে যায় এবং প্রয়োজনে ৯১১-এর মতো জরুরি পরিষেবাকেও সতর্ক করে।
এছাড়াও, পোর্টেবল এলার্ম (Portable Alarm) সবসময় সঙ্গে রাখা যেতে পারে। কোনো বিপদের আশঙ্কা দেখা দিলে এটি বাজিয়ে অন্যদের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে।
৪. স্মার্ট এয়ারপডস (Smart Airpods) ও নয়েজ ক্যান্সেলেশন প্রযুক্তি (Noise Cancellation Technology):
একা ভ্রমণের সময় গান শোনা বা পডকাস্ট শোনার জন্য স্মার্ট এয়ারপডস (Smart Airpods) খুবই উপযোগী। এর মাধ্যমে আশেপাশের শব্দের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে পছন্দের অডিও উপভোগ করা যায়।
এছাড়াও, জরুরি পরিস্থিতিতে যাতে বাইরের শব্দ শোনা যায়, সেই ব্যবস্থাও এতে থাকে।
৫. এয়ারট্যাগ (AirTag):
আপনার লাগেজ বা ব্যাগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এয়ারট্যাগ (AirTag) ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যাগের ভেতরে রেখে দিলে, আপনি আপনার ফোনের মাধ্যমে সবসময় সেটির অবস্থান জানতে পারবেন।
এর ফলে, বিমানবন্দরে লাগেজ হারিয়ে গেলে সহজেই খুঁজে বের করা সম্ভব।
৬. স্মার্ট রিং (Smart Ring):
স্মার্ট রিং (Smart Ring) ঘুমের ধরণ, হৃদস্পন্দন, এবং শরীরের তাপমাত্রা নিরীক্ষণ করতে পারে। এটি জেট ল্যাগ (Jet lag) বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যায় দ্রুত মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
ভ্রমণের সময় নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি নিজের সচেতনতাও জরুরি। অপরিচিত স্থানে যাওয়ার আগে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জেনে নিন।
সবসময় নিজের চারপাশের দিকে খেয়াল রাখুন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করুন এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সুতরাং, একাকী ভ্রমণের সময় এই গ্যাজেটগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার যাত্রা আরও নিরাপদ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, প্রযুক্তি আমাদের সহায়ক হতে পারে, কিন্তু চূড়ান্ত সুরক্ষা নির্ভর করে আপনার সচেতনতা এবং বিচক্ষণতার ওপর।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার