শিরোনাম: বিজ্ঞাপন জগতের চাকরি ছেড়ে এক নারীর বিশ্বভ্রমণ, পেরুর সমুদ্রের তীরে সীল মাছের সঙ্গে সাঁতার।
একুশ শতকে, কর্মজীবনের গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি খুঁজে নিজের স্বপ্নপূরণের উদ্দেশ্যে মানুষ ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। তেমনই একজন হলেন ৩২ বছর বয়সী নিকি ভনটায়া।
পেশায় ছিলেন বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মী। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সম্ভাবনা সত্ত্বেও, তিনি বেছে নিয়েছিলেন এক ভিন্ন পথ – বিশ্বভ্রমণের এক দুঃসাহসিক অভিযান। নিউ ইয়র্ক শহরের বিলাসবহুল জীবন এবং আকর্ষণীয় চাকরিকে বিদায় জানিয়ে, এক বছরের জন্য ১২টি দেশ ঘোরার পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন।
ভ্রমণের দশম মাসে, ডেট্রয়েটের এই নারী বর্তমানে পেরুতে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি, তিনি সমুদ্রের গভীরে সীল মাছের সঙ্গে সাঁতার কাটার এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এই যাত্রা তাঁর কাছে ছিল আত্ম-অনুসন্ধানের এক সুযোগ, যা তাঁকে নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছে।
নিজের এই অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে নিকি জানান, “৩০ বছর বয়সে, আমি প্রথমবার একাকী ভ্রমণে গিয়েছিলাম মেক্সিকোর কাবোতে। শুরুতে বেশ নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু সেই ভ্রমণটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল।” সেই আত্মবিশ্বাস থেকেই তিনি এই দীর্ঘমেয়াদী একক ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। ইউরোপ, এশিয়া ঘুরে বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আমেরিকায় এসেছেন।
পেরুতে পৌঁছানোর পর, সীল মাছের সঙ্গে সাঁতার কাটার পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখার পরেই এই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সূচনা হয়। নিকি বলেন, “ভিডিওটি দেখার পর প্রথমে বেশ অদ্ভুত লেগেছিল। সাধারণত, আমি এমন কিছু করার কথা ভাবি না। কিন্তু যখন সুযোগ এসেছিল, তখন কেন হাতছাড়া করি?”
তাঁর মা এবং পরিবারের সদস্যরা এই সিদ্ধান্তে কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলেন, তবে নিকি নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর অবিচল ছিলেন। এরপর তিনি প্রায় ৩০ জনের একটি দলের সঙ্গে স্পিডবোটে করে সমুদ্রের গভীরে যান। সেখানে যাওয়ার পথে, তাঁরা পেঙ্গুইনসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী দেখতে পান।
সীল মাছের কাছাকাছি যাওয়ার আগে, গাইডরা তাঁদের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা দেন। নিকি জানান, “গাইড আমাদের বলেছিলেন, সীল মাছদের স্পর্শ করা যাবে না এবং তাদের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে জলের মধ্যে পা উপরের দিকে রাখতে হবে।”
সীল মাছগুলো ছিল খুবই কৌতূহলী এবং জলের মধ্যে তারা বিভিন্ন কসরত দেখাচ্ছিল। “তাদের আওয়াজ শুনলে গা ছমছম করে উঠত,” যোগ করেন নিকি।
তবে সবচেয়ে ভয়ের মুহূর্তটি এসেছিল যখন একটি সীল মাছ তাঁর খুব কাছে চলে আসে। প্রথমে তিনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু গাইডদের কথা মনে করে শান্ত ছিলেন। এরপর, সেই মাছটি তাঁর পায়ে ছুঁয়ে দ্রুত চলে যায়। নিকি বলেন, “আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম, কিন্তু কিছু হয়নি। মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল, কেন আমি এই দুঃসাহসিক কাজে রাজি হলাম!”
ভয়কে জয় করে, তিনি যখন জলের মধ্যে সীল মাছদের সঙ্গে ছিলেন, সেই মুহূর্তটি তাঁর জীবনের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর একটি হয়ে ওঠে। এই প্রসঙ্গে নিকি আরও বলেন, “আমি কখনো ভুলব না সেই মুহূর্তগুলো। আমার মনে হয়েছিল, আমি যেন অন্য এক জগতে প্রবেশ করেছি।”
একক ভ্রমণে আগ্রহী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ভয়কে জয় করে এগিয়ে যান। একাকী ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে পারবেন। নিজের ভেতরের ‘হ্যাঁ’ বলার সাহসকে জাগিয়ে তুলুন।”
তথ্য সূত্র: পিপল।