ছেলের এই কাজটি দেখে বাবা-মার চোখে জল! ঋণমুক্তির খবরে আবেগঘন পরিবার

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি সুন্দর বাড়িতে, যেখানে একসময় শৈশবের স্মৃতিরা ভিড় করত, সেখানেই এক অসাধারণ ভালোবাসার গল্প জন্ম নিয়েছে।

বাংলাদেশের এক তরুণ, শো দেওয়ান, তাঁর বাবা-মায়ের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে তাঁদের বাড়ির বন্ধক পরিশোধ করেছেন। এই কাজটি ছিল তাঁর হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত, তাঁদের প্রতিদান দেওয়ার এক সুন্দর প্রচেষ্টা।

দেওয়ানের বাবা-মা, যখন তিনি মাত্র পাঁচ বছর বয়সী ছিলেন, তখন উন্নত জীবনের আশায় সুদূর বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সেখানে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন, বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন, যাতে করে ছেলে ও মেয়ের কোনো অভাব না থাকে। তাঁদের স্বপ্ন ছিল একটাই – ছেলেমেয়েরা যেন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পায়।

দেওয়ান সবসময় তাঁর বাবা-মায়ের এই ত্যাগ ও ভালোবাসার কথা স্মরণ করেছেন।

বাবা-মায়ের উৎসাহে দেওয়ান নিজের আগ্রহ ও দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে একটি সফল ক্যারিয়ার কোচিং ব্যবসা গড়ে তোলেন, যার নাম ‘ওয়ার্কহ্যাপ’। তিনি অন্যদের চাকরি খুঁজে পেতে এবং ক্যারিয়ারের সঠিক দিশা দিতে সাহায্য করেন।

তাঁর এই সাফল্যের পেছনে ছিল কঠোর পরিশ্রম এবং একটি ইতিবাচক মানসিকতা। দেওয়ান মনে করেন, প্রতিটি মানুষের নিজস্ব দক্ষতা রয়েছে, যা কাজে লাগিয়ে তারা সফল হতে পারে।

তিনি প্রায়ই বলেন, নিজের ভেতরের শক্তিকে খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী কাজ করলে, সাফল্য নিশ্চিত।

দেওয়ানের বাবা একসময় কেএফসি-তে কাজ করতেন, মেঝে পরিষ্কার করতেন, এমনকি ৭/১১-এর মতো দোকানেও কাজ করেছেন। মা ক্যাসিনোতে কাজ করতেন।

দেওয়ান বলেন, “তাঁরা শুধু চেয়েছিলেন আমাদের মুখে হাসি থাকুক।” এই কঠিন দিনগুলোতেও তাঁরা সন্তানদের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন।

দেওয়ানের বাবা একসময় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং মা ছিলেন শিক্ষিকা। কিন্তু আমেরিকায় এসে তাঁদের জীবন নতুন করে শুরু করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

দেওয়ানের বাবা এখন অবসর জীবন যাপন করছেন এবং ভালো একটা পেনশন পান। মা-ও এখন সামাজিক নিরাপত্তা পান।

দেওয়ান চেয়েছিলেন, তাঁর বাবা-মা যেন তাঁদের জীবনের বাকি দিনগুলো কোনো আর্থিক চিন্তা ছাড়াই শান্তিতে কাটাতে পারেন। তাই তিনি তাঁদের বাড়ির ঋণ পরিশোধ করে তাঁদেরকে এই উপহারটি দিয়েছেন।

নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা বলতে গিয়ে দেওয়ান বলেন, “আমি চেয়েছিলাম, তাঁরা যেন কোনো আর্থিক বোঝা ছাড়াই তাঁদের জীবন উপভোগ করতে পারেন। তাঁরা আমাদের জন্য যা করেছেন, তার প্রতিদান দেওয়া আমার কর্তব্য।”

তিনি আরও বলেন বাবা-মা কখনোই তাঁকে কোনো নির্দিষ্ট পেশা বেছে নিতে বাধ্য করেননি। তাঁরা সবসময় চেয়েছেন, তিনি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক এবং নিজের পছন্দের কাজ করুক।

সম্ভবত, এই স্বাধীনতা তাঁকে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে সাহায্য করেছে।

দেওয়ান তাঁর সাফল্যের জন্য সামাজিক মাধ্যম, বিশেষ করে ভিডিওর গুরুত্ব স্বীকার করেন। তাঁর মতে, এই মাধ্যম তাঁর ব্যবসার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

তিনি মনে করেন, মানুষের ভেতরের দক্ষতাগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারলে, যেকোনো মানুষ সফল হতে পারে। তাঁর এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং বাবা-মায়ের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *