ভুল অনুবাদ! হারিয়ে যাওয়া ‘ওয়েড’ বীরের আসল রহস্য উন্মোচন!

মধ্যযুগের একটি হারিয়ে যাওয়া বীরগাথা নিয়ে কয়েক শতাব্দী ধরে চলা বিভ্রান্তির অবসান ঘটিয়েছেন গবেষকরা। ত্রুটিপূর্ণ একটি লেখার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল এই জটিলতা, যা অবশেষে উন্মোচন করা গেছে।

মধ্যযুগে ‘সং অফ ওয়েড’ (Song of Wade) নামে পরিচিত একটি বীরত্বপূর্ণ কাহিনী প্রচলিত ছিল, যা একসময় ইংল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয় ছিল। এমনকী বিখ্যাত সাহিত্যিক চসারের লেখাতেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ায়, বর্তমানে এর অস্তিত্ব প্রায় ভুলতে বসেছে মানুষ।

সম্প্রতি, গবেষকরা জানিয়েছেন, এই কাহিনীর কিছু অংশ এখনো টিকে আছে, যা বিশ্লেষণ করে অনেক অজানা তথ্য জানা সম্ভব হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যামব্রিজের গবেষকরা জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণভাবে লেখার কারণে এই কাহিনীর ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর একটি ল্যাটিন ধর্মোপদেশে এই কাহিনীর কিছু অংশ পাওয়া গিয়েছিল।

সেখানে ‘ইয়েলভস’ (ylves) শব্দটিকে ‘এল্ভস’ (elves) হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছিল, যার অর্থ হলো ‘পরীরা’। এর ফলে ধারণা করা হতো, ওয়েডের কাহিনীতে অতিপ্রাকৃত কিছু বিষয় ছিল। কিন্তু গবেষকরা এই ধারণার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

তাদের মতে, আসল শব্দ ছিল ‘ওল্ভস’ (wolves), অর্থাৎ ‘নেকড়ে’। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওয়েডের গল্পে অতিপ্রাকৃত প্রাণীর বদলে ভয়ঙ্কর কিছু মানুষের কথা বলা হয়েছে।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ‘স্প্রাইটস’ (sprites) শব্দটির সঠিক অর্থ ‘সাগর-সাপ’, যা আগে ভুলভাবে অনুবাদ করা হয়েছিল। নতুন এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ওয়েডের কাহিনীতে কল্পনাবাদী বিষয়গুলো এড়িয়ে বাস্তবতার দিকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।

গবেষকদের মতে, ওয়েড ছিলেন বীরত্বপূর্ণ এক যোদ্ধা, যিনি বাস্তব জগতের বিপদ ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতেন, যেমনটা নাইটদের গল্পে দেখা যায়।

গবেষকদের এই নতুন ব্যাখ্যা ‘সং অফ ওয়েড’-এর ভুল ধারণা দূর করতে সাহায্য করবে। গবেষক ড. সেব ফক এবং ড. জেমস ওয়েডের মতে, এই গবেষণা মধ্যযুগীয় সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দেবে।

ঐতিহাসিকদের মতে, চসারের লেখায় ওয়েডের উল্লেখ পাওয়া গেলেও, এর সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন ছিল। তবে, ওয়েডকে যদি বীর হিসেবে দেখা যায়, তাহলে চসারের লেখায় তার উপস্থিতি আরও স্পষ্ট হয়।

গবেষকরা জানিয়েছেন, মধ্যযুগে জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে ‘সং অফ ওয়েড’-এর একটি বিশেষ স্থান ছিল। ধর্মোপদেশে এর উল্লেখ থেকে বোঝা যায়, তখনকার মানুষ এই কাহিনীটিকে তাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করত।

গবেষকদের মতে, এই ধরনের জনপ্রিয় কাহিনীগুলো সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

যদিও ‘সং অফ ওয়েড’-এর পুরোটা পাওয়া যায়নি, তবে এর কিছু অংশ বিভিন্ন লেখায় পাওয়া যায়। জানা যায়, ওয়েড ড্রাগন বধ করেছিলেন এবং তার দৈহিক গঠন ছিল বিশাল।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্টেফানি ট্রিগ বলেছেন, হাতে লেখা নথিপত্র নিয়ে গবেষণা করা সব সময় সহজ নয়। কারণ, সে সময় বানান এবং শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম ছিল না।

গবেষকদের মতে, ধর্মোপদেশের প্রেক্ষাপটে এই কাহিনীর আলোচনা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে আমরা মধ্যযুগীয় সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের অনেক অজানা দিক সম্পর্কে জানতে পারি।

বর্তমানে ‘সং অফ ওয়েড’ হয়তো অনেকের কাছে অজানা, কিন্তু মধ্যযুগে এটি যে খুবই জনপ্রিয় ছিল, তা বিভিন্ন প্রমাণ থেকে বোঝা যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে এবং একসময় এটি হারিয়ে যায়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *