দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকার মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন ভূমি সংস্কার আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
এই আইনের মাধ্যমে দেশটির সরকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের থেকে জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে, যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে ‘জাতিগত নিপীড়ন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা এই আইনটি অনুমোদন করেন। আইনটি মূলত ভূমি মালিকানার পুনর্বণ্টনের উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
এর ফলে সরকার জনসাধারণের স্বার্থে—যেমন, অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভূমি সংস্কার ইত্যাদি—জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে। তবে, এই আইনে ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা হলেও, কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জমি-অধিগ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
ঐতিহাসিকভাবে, শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানরা, যারা মূলত ডাচ colonizer-দের বংশধর, তারা দেশটির মোট জমির ৭০ শতাংশের মালিক, যেখানে তাদের জনসংখ্যা মাত্র ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে এবং তাদের জমির অধিকার খুবই সীমিত। প্রেসিডেন্ট রামাপোসার সরকার বলছে, এই নতুন আইনটির মাধ্যমে অতীতে বঞ্চিত হওয়া কৃষ্ণাঙ্গ, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে জমি বিতরণ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন এবং এর ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি এই ভূমি আইনকে ‘অন্যায়’ এবং ‘জাতিগত বৈষম্যমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের মতে, এই আইন শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice – ICJ) মামলা করায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বলছে, এই আইন কোনো ‘জবরদখল’ নয়, বরং এটি সংবিধানের নির্দেশিত একটি প্রক্রিয়া।
এর মাধ্যমে জনগণের জন্য জমির অধিকার নিশ্চিত করা হবে। দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা জানান, এই আইনটি জনগণের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
এই বিতর্কের মধ্যে, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমীকরণও কাজ করছে।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার তাদের অবস্থান থেকে সরে আসতে নারাজ, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা