দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের উপর ‘গণহত্যা’র অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প।
এই অভিযোগের স্বপক্ষে তিনি একটি ভিডিও দেখান, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। খবর অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পর রামাপোসার শান্ত ও দৃঢ়চেতা মনোভাব দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
বৈঠকে ট্রাম্পের উত্থাপিত অভিযোগগুলোর জবাব দিতে গিয়ে রামাপোসা বেশ কয়েকবার তার অভিজ্ঞতার পরিচয় দেন। তিনি কোনো প্রকার উত্তেজনায় না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, ট্রাম্পের এমন আচরণের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না রামাপোসা।
তারা আরও মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে রামাপোসার আর কিছু করার ছিল না।
বৈঠকে রামাপোসার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জোহান রুপার্ট। তিনি ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই সহিংস অপরাধের শিকার হচ্ছে। এমনকি তিনি ইলন মাস্কের সাহায্য চেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ স্টেশনগুলোতে স্টারলিঙ্ক ও ড্রোন ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।
তবে রুপার্টের কথা ট্রাম্পের কানে পৌঁছায়নি।
বৈঠকে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিতর্কিত গান ‘কিল দ্য বোর’ বাজানো হয়, যা শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের হত্যার ইঙ্গিত দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই গানটি ১৯৮০-এর দশকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ হিসেবে জনপ্রিয় হয়।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার আদালত এই গানের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ কৃষক হত্যার সরাসরি আহ্বানের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
বৈঠকে ট্রাম্প জানতে চান, কেন রামাপোসা ওই গানের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করেননি। এর জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরোধী দলের নেতা মালিমা বলেন, “কিছু বয়স্ক লোক আমার সম্পর্কে ওয়াশিংটনে বসে গল্প করছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, ভূমি সংস্কারের প্রশ্নে তারা কোনো আপস করবেন না।
ট্রাম্পের আনা ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’র অভিযোগের সমর্থনে উপস্থাপন করা তথ্যের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক দক্ষিণ আফ্রিকান মনে করেন, এই ধরনের তথ্য শ্বেতাঙ্গ অধিকার গোষ্ঠী ‘আফ্রিকোর’ প্রচারণার অংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে চাপে ফেলা। তবে রামাপোসা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্ষম হয়েছেন।
এই ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক মানুষ রামাপোসার প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, রামাপোসা একজন যোগ্য নেতা এবং তিনি দেশের সম্মান রক্ষা করেছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন