যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরতেই উষ্ণ সংবর্ধনা জানালো সমর্থকরা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তাকে ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছিল, অর্থাৎ অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সম্প্রতি, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যার জেরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কেপ টাউন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম রাসুল এবং তার স্ত্রী রোসিদাকে সংবর্ধনা জানাতে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ’ সমর্থক। বিমানবন্দরে তাদের আগমনের পর নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়। সমর্থকরা তাদের ভালোবাসায় গান গেয়ে বরণ করে নেয়।
সমর্থকদের উদ্দেশ্যে রাসুল বলেন, “পার্সোনা নন গ্রাটা ঘোষণা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল অপমান করা। কিন্তু আপনাদের এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, এই সম্মান আমার কাছে অনেক বড়।” তিনি আরও বলেন, “আমার বাড়ি ফেরার কোনও ইচ্ছে ছিল না, তবে আমরা কোনো অনুশোচনা নিয়ে ফিরছি না।”
জানা যায়, একটি ওয়েবিনারে দেওয়া বক্তব্যে রাসুল মন্তব্য করেছিলেন যে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ বা ‘মাগা’ আন্দোলন শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই মন্তব্যের জের ধরেই তাকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে রাসুল বলেন, “আমরা এখানে এসেছি, এটা বলতে যে আমরা আমেরিকান বিরোধী। আমরা চাই না যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের স্বার্থের কোনও ক্ষতি হোক।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইরানের প্রতি সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। এমনকি, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বিরোধী নীতি গ্রহণেরও অভিযোগ করেছেন। এর ফলস্বরূপ, গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সমস্ত আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক টুইট বার্তায় রাসুলকে ‘জাতিবিদ্বেষী রাজনীতিবিদ’ হিসেবে অভিহিত করেন। রুবিও’র মতে, রাসুল যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রাম্পকে ঘৃণা করেন। যদিও রুবিও সরাসরি কোনো কারণ উল্লেখ করেননি, তবে তিনি একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক শেয়ার করেছেন, যেখানে রাসুলের একটি বক্তৃতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বক্তৃতায় রাসুল ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করেছিলেন।
রাসুল তার মন্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, তিনি কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার বুদ্ধিজীবী এবং রাজনৈতিক নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে সতর্ক করতে চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “এখনকার যুক্তরাষ্ট্র, ওবামা বা ক্লিনটনের সময়কার যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়। তাই আমাদের ভাষারও পরিবর্তন হওয়া উচিত।”
গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের গণহত্যায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice) দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার বিরোধিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনো দেশের চাপকে তিনি প্রত্যাখ্যান করবেন বলেও জানান।
তথ্য সূত্র: The Guardian