দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক নাটকীয় পটপরিবর্তনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডুক-সু’কে পুনরায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের পদে বহাল করা হয়েছে। দেশটির সাংবিধানিক আদালত সোমবার এক রায়ে তাঁর অভিশংসন খারিজ করে দেন। এর মাধ্যমে কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও একটি মোড় নিল।
গত বছরের শেষের দিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইউন সুক-ইয়েল সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর অভিশংসিত হলে, হান ডুক-সু ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে এই পদে তিনি বেশি দিন টিকতে পারেননি। বিরোধী দল-নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে এবং সাংবিধানিক আদালতে আরও তিনজন বিচারক নিয়োগ দিতে রাজি না হওয়ায় ২৭শে ডিসেম্বর তাঁকে অভিশংসিত করা হয়।
আদালতের আট বিচারকের মধ্যে সাতজন সোমবারের শুনানিতে হান ডুক-সুর অভিশংসন বাতিলের পক্ষে রায় দেন। আদালতের বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, পাঁচজন বিচারক অভিশংসন প্রস্তাবের বৈধতা দিলেও, হান-এর বিরুদ্ধে সংবিধান বা সামরিক আইন ঘোষণার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দুইজন বিচারক মনে করেন, যেহেতু পার্লামেন্টের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য এই প্রস্তাব পাস করেননি, তাই হান-এর বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন শুরু থেকেই অবৈধ ছিল। অপর একজন বিচারক হান-কে অভিশংসিত করার পক্ষে ভোট দেন।
পঁচাত্তর বছর বয়সী হান ডুক-সু বিভিন্ন সময়ে পাঁচ জন রাষ্ট্রপতির অধীনে তিন দশকের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হান ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারতেন।
অন্যদিকে, বিরোধী দল-নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্ট অভিযোগ করে যে ইউন-এর সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত ঠেকাতে হান পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেননি। যদিও হান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইউন ও হানের মামলাগুলো সাংবিধানিক আদালতে বিচারাধীন থাকায় অর্থমন্ত্রী চোই সাং-মোক ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সামরিক আইন জারির বিষয়ে হানের ভূমিকা এবং সাংবিধানিক আদালতে আরও বিচারক নিয়োগ দিতে অস্বীকৃতি জানানো, এমনকি ইউন ও ফার্স্ট লেডি কিম গিয়ন-হির বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাব সমর্থন না করার অভিযোগে পার্লামেন্ট তাঁকে অভিশংসিত করে। ১৯শে ফেব্রুয়ারি শুনানিতে হান সামরিক আইনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং আদালতকে তাঁর অভিশংসন বাতিলের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ইউন সুক-ইয়েলের আকস্মিক সামরিক আইন ঘোষণার জেরে কোরিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ, তারা ইউনকে চীন ও উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করত। যদিও শেষ পর্যন্ত আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার মুখে সামরিক আইন প্রায় ছয় ঘণ্টা পরেই বাতিল করা হয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান