দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এখন চরম অস্থিরতা চলছে, দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর নতুন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ইউন সামরিক আইন জারি করেন, যা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে।
অনেকেই জানতে চান, কেন তিনি এমন একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে এখন বিভক্ত দক্ষিণ কোরিয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইউন সুক ইওলের এই সিদ্ধান্ত দেশটির গণতন্ত্রের জন্য একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। একদিকে ইউন-এর সমর্থকেরা মনে করেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কিছু রাজনীতিবিদ দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন, তাদের রুখতেই এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।
তাদের মতে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ইউনকে তার কাজ করতে বাধা দিচ্ছিল।
অন্যদিকে, ইউন-এর বিরোধীরা বলছেন, মূলত দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতেই তিনি এমনটা করেছেন। তাদের ধারণা, নিজের ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা ছিল এটি।
এমনকি, অনেকে মনে করেন, দক্ষিণপন্থী ইউটিউবারদের প্ররোচনায় তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন, যারা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সামরিক শাসনের একটি কালো অধ্যায় রয়েছে। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশকে সামরিক শাসনের স্মৃতি এখনো মানুষের মনে টাটকা।
তাই প্রেসিডেন্টের এমন সিদ্ধান্তে জনগণের মধ্যে গভীর বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, সামাজিক অবস্থান, অর্থনীতি, লিঙ্গ এবং বয়স—সব ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউন-এর সমর্থকরা মনে করেন, বিরোধী দলের বাধার কারণেই প্রেসিডেন্টকে এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তারা উত্তর কোরিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে সাইবার হামলা, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং প্রযুক্তি চুরির মতো অভিযোগ তোলেন।
তবে ডেমোক্রেটিক পার্টি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
অন্যদিকে, ইউন-এর সমালোচকরা মনে করেন, তিনি আসলে ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাদের মতে, ইউন ছিলেন একজন অযোগ্য রাজনীতিবিদ, যিনি আলোচনা ও আপসের পরিবর্তে দমননীতি বেছে নিয়েছিলেন।
কেউ কেউ আবার মনে করেন, দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বাঁচতেই তিনি এমনটা করেছেন। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে একটি দুর্নীতির অভিযোগ, যেখানে ইউন ও তার স্ত্রী ২০২০ সালের একটি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে, ইউন-এর দল এবং বিরোধী দল উভয়ই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ, প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য—সবকিছুকেই প্রভাবিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস