দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মীদের আটকের ঘটনা: যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের উপর প্রভাবের আশঙ্কা
যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমিকদের আটকের ঘটনা দেশটির বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। গত সপ্তাহে জর্জিয়ার একটি নির্মাণাধীন ব্যাটারি প্ল্যান্টে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
এই অভিযানে তিনশ জনের বেশি দক্ষিণ কোরীয় কর্মীকে আটক করা হয়। এই ঘটনার জেরে কোরীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে এক ধরনের ‘বিভ্রান্তিকর’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জায়ে-মিয়ুং তার অফিসের ১০০তম দিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কোরীয় কোম্পানিগুলো এখন ভিসা পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, তারা আদৌ বিনিয়োগ করতে যাবে কিনা।
তিনি আরও বলেন, “এই সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।” তাই দক্ষিণ কোরিয়া সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে।
প্রয়োজনে পর্যাপ্ত ভিসার ব্যবস্থা করা হোক, অথবা নতুন ভিসা ক্যাটাগরি তৈরি করা হোক।
আটকদের আটলান্টা থেকে সিউলে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। কর্মীদের আটকের ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
দেশটির সাধারণ মানুষ মনে করছেন, এটি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে আঘাত হেনেছে। কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আটক শ্রমিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
দক্ষিণ কোরিয়া সরকার জোর দিয়ে বলেছে, তাদের নাগরিকদের দ্রুত এবং নিরাপদে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, কর্মীদের প্রথমে দেশে ফিরিয়ে এনে, পরে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে কাজে যোগ দেওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, আটকের সময় কর্মীদের হাতকড়া পরানো হয়নি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী, এমন ক্ষেত্রে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।
গত সপ্তাহে জর্জিয়ার এলাবেলের একটি ব্যাটারি প্ল্যান্টে আইসিই অভিযান চালায়। এই প্ল্যান্টটি দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি বৃহৎ কোম্পানি – হুন্দাই এবং এলজি এনার্জি সলিউশনের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে।
আটকের ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এমন ঘটনার ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করবে কোরীয় কোম্পানিগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। জানা যায়, আটক হওয়া কর্মীদের অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সেখানে ছিলেন।
আবার কেউ কেউ ছিলেন ভিসা ওয়েভার প্রোগ্রামের অধীনে, যা পর্যটন বা ব্যবসার জন্য ৯০ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশটির শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করে আসছেন। এমতাবস্থায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ভিসা অনুমোদন না করাটাও একটি সমস্যা।
বিষয়টি বিবেচনা করে, সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে ‘পার্টনার উইথ কোরিয়া অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল উত্থাপন করা হলেও, সেটি এখনো পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি লাভ করেনি।
কোরীয় কর্মীদের জন্য নতুন ভিসা ক্যাটাগরি তৈরি করার বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন