দক্ষিণ কোরিয়া: প্রধান বিরোধী দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী!

দক্ষিণ কোরিয়ার আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়ার প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন প্রধান লি জে-ম্যুংয়ের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী জুনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের অভিশংসনের কারণে এই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে।

রবিবার দলের মনোনয়ন লাভের পর এক ভাষণে লি বলেন, “আমি শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নই, বরং যারা বিদ্রোহের অবসান, সংকট উত্তরণ এবং ঐক্য ও সুখের প্রত্যাশা করেন, তাদের সকলের প্রার্থী।” প্রাথমিক নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে তিনি দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন, যেখানে আরও দুই জন প্রার্থী ছিলেন।

লি-কে একজন প্রগতিশীল নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি বৃহত্তর অর্থনৈতিক সমতা এবং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পক্ষে। তিনি বর্তমানে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন। গত বছর সামরিক আইন জারির চেষ্টার পর ইউনকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

এর আগে, ৬০ বছর বয়সী লি দেশটির প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ডিসেম্বরে সামরিক আইন জারির আদেশের বিরুদ্ধে ইউন-এর অভিশংসন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। তিনি ইউন-এর সামরিক আইন জারির চেষ্টা এবং অতীতের স্বৈরাচারী শাসকদের কার্যক্রমের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পান। একইসাথে, তিনি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

সংবিধান আদালত ইউনকে অপসারণের রায় দেওয়ার পর নতুন নির্বাচনের ডাক দেওয়া হয়। লি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন এবং রক্ষণশীল পিপলস পাওয়ার পার্টির প্রার্থীদের থেকে দ্বিগুণের বেশি সমর্থন লাভ করেছেন। পিপলস পাওয়ার পার্টি আগামী ৩ মে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করবে।

এর আগে, লি দুবার রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে তিনি ইউন-এর কাছে সামান্য ব্যবধানে পরাজিত হন, যা দক্ষিণ কোরিয়ার গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটের ব্যবধান ছিল। ২০১৭ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে তৃতীয় হয়েছিলেন।

লি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি, উচ্চ প্রযুক্তির শিল্পে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া, সাংস্কৃতিক দিক থেকে দেশকে শক্তিশালী করা এবং একটি আদর্শ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার লি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গিয়ংগির গভর্নর এবং সিওংনাম শহরের মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

তবে বর্তমানে তিনি দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগে পাঁচটি মামলার সম্মুখীন। এর মধ্যে ঘুষ গ্রহণ এবং ১ বিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি উন্নয়ন কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে সম্ভবত এই বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হতে পারে, কারণ প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পিপলস পাওয়ার পার্টি ইউন-এর সামরিক আইনের ঘোষণার পর জনসমর্থন ফিরে পেতে সংগ্রাম করছে। লি সামরিক আইনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আলোচনায় আসেন। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভবনের চারপাশে সেনা মোতায়েন করা হলে তিনি দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং শেষ পর্যন্ত এই আইন বাতিলের পক্ষে ভোট নিশ্চিত করতে সহায়তা করেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *