দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতা চলছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইওলের ক্ষমতাচ্যুতির সিদ্ধান্তের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বহাল করেছে সাংবিধানিক আদালত। গত বছর প্রেসিডেন্টের জারি করা সামরিক আইনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত আসে।
খবর অনুযায়ী, দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান ডক-সুর বিরুদ্ধে আনা অভিশংসন প্রস্তাব বাতিল করে তাকে স্বপদে বহাল করেছে আদালত।
ডিসেম্বরের ৩ তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়ুন আকস্মিকভাবে সামরিক আইন জারির ঘোষণা করেন, যা ছিল মূলত বিরোধী দলের সঙ্গে উত্তেজনার ফল। এই ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয় এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের গণতন্ত্রের কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়।
তবে, আইনপ্রণেতাদের তীব্র বিরোধিতার মুখে ছয় ঘণ্টার মধ্যেই তিনি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। আইনপ্রণেতারা সংসদ ভবনে প্রবেশ করে সর্বসম্মতভাবে এই ডিক্রি বাতিল করেন।
এরপর, ১৪ই ডিসেম্বর আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট ইয়ুনকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রী হান ১৩ দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি সাংবিধানিক আদালতের শূন্য তিনটি পদে নিয়োগ দিতে অস্বীকার করেন।
এর ফলস্বরূপ, প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, হান বিচারক নিয়োগ না দিয়ে সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছেন এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করেছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টি আরও অভিযোগ করে যে, হান ফার্স্ট লেডি কিম কেওন-হির বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্ত আইন পাস করতে রাজি হননি এবং ইয়ুনকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মিলে রাষ্ট্র পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন।
আদালতে শুনানিতে আটজন বিচারকের মধ্যে মাত্র একজন হানের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। আদালত জানায়, বিচারক নিয়োগে হানের অস্বীকৃতির মাধ্যমে সংবিধানকে অকার্যকর করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই তাকে অভিশংসন করা যাবে না।
এই রায়ের ফলে প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ইয়ুনের সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্তের বিষয়েও এখনো আদালতের রায় আসেনি। তিনি বিরোধী দলের প্রতি উত্তর কোরিয়ার প্রতি সহানুভূতি এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনেছিলেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ কৌঁসুলিদের অভিশংসন এবং সরকারের বাজেট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হান আদালতের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এটিকে ‘জ্ঞানী’ সিদ্ধান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন