দক্ষিণ কোরিয়ায় কয়েক দশক ধরে অবৈধ থাকার পর অবশেষে বৈধতা পেতে চলেছে উল্কি (Tattoo) আঁকা। দেশটির পার্লামেন্ট সম্প্রতি একটি বিল অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ট্যাটু শিল্পীদের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এতদিন পর্যন্ত, শুধুমাত্র চিকিৎসা পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই এই কাজ করতে পারতেন।
খবর অনুযায়ী, এই সিদ্ধান্তের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার ট্যাটু শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে যে আইনি জটিলতা ও হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন, তা থেকে মুক্তি পাবেন।
দীর্ঘদিন ধরে ট্যাটু শিল্পের সঙ্গে জড়িত কিম চান-হো-এর মতো শিল্পীরা জানিয়েছেন, তারা এখন তাদের পেশাকে গর্বের সঙ্গে পরিচয় দিতে পারবেন। কিম জানান, এতদিন পর্যন্ত তিনি যখন কোনো সরকারি অফিসে যেতেন, তখন তাকে একজন দক্ষ ট্যাটু শিল্পী হিসেবে নয়, বরং ট্যাটু করার সরঞ্জাম সহ একজন অপরাধী হিসেবে দেখা হতো।
১৯৯২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে ট্যাটু আঁকাকে চিকিৎসা বিষয়ক একটি পদ্ধতি হিসেবে উল্লেখ করে। এর ফলে, দেশটির মেডিকেল সার্ভিসেস অ্যাক্ট অনুযায়ী, শুধুমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকরাই এই কাজটি করতে পারতেন। সেই সময় ট্যাটুকে সমাজের চোখে খারাপ হিসেবে দেখা হতো। এমনকি গোরিও রাজবংশের সময় অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে শরীরে উল্কি আঁকা হতো।
তবে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিশেষ করে ২০১০-এর দশকে ট্যাটুর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। কোরিয়ার জনপ্রিয় শিল্পী জি-ড্রাগন, লি হিউরি এবং কোরিয়ান-আমেরিকান র্যাপার জে পার্কের মতো তারকারা ট্যাটুকে গ্রহণ করার পর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ে।
কিম জানান, জি-ড্রাগনের ডিজাইন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি প্রায় এক হাজারের বেশি ট্যাটু এঁকেছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার ট্যাটু শিল্পীরা দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পের বৈধতার জন্য লড়াই করছিলেন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের স্টুডিওতে অভিযান চালানো হয়েছে এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হয়েছে।
অনেক সময় ক্লায়েন্ট বা প্রতিপক্ষের দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পী সি জানান, তাদের ব্যবসার সুবিধার্থে দোকানের সাইনবোর্ড বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারও সীমিত ছিল। সরকারি কোনো নথিপত্রে তারা নিজেদের ‘ফ্রিল্যান্সার’ হিসেবে পরিচয় দিতেন, কারণ ট্যাটু শিল্পী হিসেবে পরিচয় দিলে ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন হতো।
জানা গেছে নতুন এই আইনের ফলে ট্যাটু শিল্পীদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার উপর প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। এছাড়া, লাইসেন্সিংয়ের মতো বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এই বিলটি পাশ হওয়ার পর, সরকার নতুন নিয়ম তৈরি করতে দুই বছর সময় পাবে। কোরিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনসহ (Korean Medical Association) অনেকেই এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মতে, ট্যাটু একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্তমানে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্যাটু শিল্পের বাজার প্রায় ১৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মতো।
তথ্য সূত্র: সিএনএন