মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আটকদের মুক্তি! অবশেষে স্বস্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া

দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমিকদের আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে সিউল। জর্জিয়ার একটি হাইন্দাই কারখানায় অভিবাসন বিভাগের অভিযানে আটকের শিকার হওয়া তিন শতাধিক দক্ষিণ কোরীয় শ্রমিককে মুক্তি দিয়ে শীঘ্রই দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

রবিবার দেশটির সরকার এই ঘোষণা দেয়। কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জায়ে মিয়ং-এর চিফ অব স্টাফ কাং হুন-সিক জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে শ্রমিকদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকদের দেশে ফেরাতে একটি বিশেষ বিমান পাঠানোর পরিকল্পনা করছে সিউল।

মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার হাইন্দাই-এর বিশাল ম্যানুফ্যাকচারিং সাইটে অভিযান চালানো হয়, যেখানে কোরিয়ান এই গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাটি ইলেক্ট্রিক ভেহিকল (ইভি) তৈরি করে।

অভিযানে প্রায় ৪৭৫ জন আটক হয়, যাদের অধিকাংশই দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। এই কারখানায় হাইন্দাই, এলজি এনার্জি সলিউশনের সঙ্গে যৌথভাবে ইভি-র ব্যাটারি তৈরির কাজ করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো হিউন জানান, আটককৃতদের মধ্যে তিন শতাধিক দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক রয়েছেন।

আটকের এই ঘটনাটি ঘটে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন নীতি কঠোর করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে। তবে এই অভিযানটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ যে স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি জর্জিয়ার বৃহত্তম অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশ হওয়ায় এই ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের জ্বালানি কেনার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে দক্ষিণ কোরিয়া, যার বিনিময়ে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব ছিল।

দুই সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট লি-এর মধ্যে ওয়াশিংটনে প্রথম শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আটকের ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট লি এই বিষয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মার্কিন আইন প্রয়োগের সময় দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদের অধিকার ও কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রম যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রতি উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করে এবং ঘটনাস্থলে কূটনীতিক পাঠায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফেডারেল এজেন্টরা একটি কারখানার দিকে গাড়িবহর নিয়ে যাচ্ছেন এবং শ্রমিকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলছেন।

আটককৃতদের মধ্যে কয়েকজনকে বাসের সামনে হাত উঁচু করে দাঁড়াতে এবং পরে হাতকড়া, পায়ের বেড়ি ও কোমরে শিকল পরাতে দেখা যায়।

আটককৃতদের অধিকাংশই জর্জিয়ার ফোকস্টন শহরের একটি অভিবাসন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে, যা ফ্লোরিডা রাজ্যের কাছাকাছি অবস্থিত।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনসের জর্জিয়ার প্রধান এজেন্ট স্টিভেন শ্র্যাঙ্ক শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি এবং তদন্ত এখনো চলছে।

তিনি আরও জানান, আটককৃতদের মধ্যে কেউ কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, আবার কেউ বৈধভাবে প্রবেশ করলেও তাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অথবা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই তারা কাজ করছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ কাং হুন-সিক জানিয়েছেন, বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া কর্মীদের ভিসা ব্যবস্থার পর্যালোচনা ও উন্নতির জন্য সিউল পদক্ষেপ নেবে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *