দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়ুন-এর অভিশংসনের বিরুদ্ধে-পক্ষে বিভক্ত জনতা, উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের অভিশংসন নিয়ে দেশটির সাংবিধানিক আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী সিউলে একদিকে যেমন প্রেসিডেন্টের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে, তেমনই তাঁর সমর্থনেও রাস্তায় নেমেছেন বহু মানুষ। খবর অনুযায়ী, গত শনিবার শহরের কেন্দ্রস্থলে তীব্র শীত উপেক্ষা করে দুই পক্ষের সমর্থকরা ব্যানার ও পতাকা হাতে বিশাল সমাবেশ করেন।
ডিসেম্বরের ৩ তারিখে প্রেসিডেন্টের জারি করা এক সামরিক আইনের ডিক্রির জের ধরে দেশটির জাতীয় পরিষদ (National Assembly) ইয়ুন সুক ইওলের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব পাস করে। এর পর থেকেই তিনি সাময়িকভাবে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। বর্তমানে সাংবিধানিক আদালত তাঁর চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আদালত যদি অভিশংসন বহাল রাখে, তাহলে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই অনিশ্চয়তার কারণে, উভয় পক্ষের সমর্থকরাই এখন প্রতি সপ্তাহান্তে আরো বেশি সংখ্যায় রাজপথে নামছেন। ইয়ুনকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভকারী লি হান-সোল এএফপি সংবাদ সংস্থাকে জানান, “চলমান সংকটগুলোর সমাধানে বিলম্ব হওয়ায় দেশের মানুষ হতাশ ও ক্লান্ত। এই দীর্ঘসূত্রিতা জনগণের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।” অন্যদিকে, ইয়ুন-এর সমর্থকরা, যাদের মধ্যে ডানপন্থী ইউটিউবার এবং ধর্মীয় নেতারাও রয়েছেন, তাঁরা এই অভিশংসন প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলে মনে করছেন। সমর্থক লি হাই-সুক বলেন, “সাংবিধানিক আদালত আমাদের উপেক্ষা করতে পারবে না। দেখুন, আমরা এখানে কতজন আছি!”
উল্লেখ্য, এক সময়ের সরকারি কৌঁসুলি ইয়ুনকে জানুয়ারিতে বিদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যদিও পরে তিনি কিছু আইনি ত্রুটির কারণে মুক্তি পান। মুক্তির পর থেকে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন এবং বিরোধীদের ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়রানির’ অভিযোগ করেছেন।
এই মাসের শুরুতে প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ মানুষ ইয়ুনকে অপসারণের পক্ষে মত দিয়েছেন। সাংবিধানিক আদালতের কাছে ইয়ুনের অভিশংসন মামলার রায় প্রদানের জন্য ১৮০ দিন সময় রয়েছে, যা জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। অতীতে, এই ধরনের রাষ্ট্রপতি অভিশংসন মামলার রায় আদালত সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দিয়ে দিতো। তবে, এবার সময় বেশি লাগছে, যদিও এর কারণ এখনো জানা যায়নি।
যদি আদালত ইয়ুনের অভিশংসন বহাল রাখে, তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিয়ুং-কে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অন্যতম প্রধান প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে, তবে তিনি বর্তমানে কিছু আইনি জটিলতার সম্মুখীন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা