দক্ষিণ সুদানে মার্কিন সাহায্য কমানোর ফল, কলেরায় শিশুদের মৃত্যু।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সুদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য হ্রাস করার কারণে সেখানকার স্বাস্থ্য পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এর ফলে তীব্র গরমে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ পথ হেঁটে হাসপাতালে যাওয়ার সময় পাঁচ শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অধীনে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে অর্থ বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্তের সরাসরি ফল হিসেবেই এই মৃত্যুগুলো ঘটেছে। জানা গেছে, চলতি বছর মার্কিন সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জংলেই প্রদেশের সাতটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া, আরও ২০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
এর ফলে প্রায় ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীরা হাসপাতালে যেতে পারছিলেন না। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যে পরিবহন ব্যবস্থা ছিল, সেটিও অর্থ সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
ফলে কলেরা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে যেতে হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের দক্ষিণ সুদানের পরিচালক ক্রিস্টোফার নিয়ামান্ডি বলেন, “অন্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের কারণে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, যা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়।”
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, অর্থ সহায়তা হ্রাসের কারণে অপুষ্টি, এইডস, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়ে ভবিষ্যতে আরও বহু মানুষের মৃত্যু হতে পারে। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (USAID) ৯০ শতাংশের বেশি চুক্তি বাতিল করেছে।
যদিও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি, তবে তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানে তাদের সাহায্য কার্যক্রম এখনো চলছে। একইসঙ্গে দেশটির নেতাদের বিরুদ্ধে বিদেশি সাহায্য অপব্যবহারের অভিযোগও আনা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, “আমরা জরুরি জীবনরক্ষাকারী কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখব, তবে দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য আমেরিকান করদাতাদের অর্থ সাহায্য করতে পারি না।”
দক্ষিণ সুদানের সরকার ব্যাপক দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেও, প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দুর্নীতির কারণে মানবিক সহায়তা মূলত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হ্রাসের পাশাপাশি অন্যান্য দাতাদের অনুদান কমে যাওয়ায় দক্ষিণ সুদানের মানবিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের বাজেট গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এ বছর প্রায় ৩ কোটি ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২০ কোটি টাকা) দাঁড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদানের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বর্তমানে সংঘাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান লড়াই নতুন করে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল, ইউনিসেফ (UNICEF) -এর তথ্যমতে, গত বছর অক্টোবর মাসে দক্ষিণ সুদানে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে এবং ৭০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি ছিল ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু। কলেরা একটি মারাত্মক ডায়রিয়া রোগ, যা দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা