যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফেরাতে এগিয়ে আসছে তরুণ প্রজন্ম। দক্ষিণ সুদানে দীর্ঘদিনের সংঘাতের ক্ষত এখনো গভীর।
২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশটি বহুবার সহিংসতার শিকার হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের গৃহযুদ্ধ দেশটির শান্তি প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বর্তমানে, শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং সমাজের ক্ষত সারাতে তরুণ প্রজন্মের সাহসী পদক্ষেপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে।
মালকালে বসবাসকারী লুনিয়া ওকুচ নামের এক তরুণ শান্তি দূত বলেন, “অতীতে যা ঘটেছে, তা অতীত। এখন আমাদের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে হবে।”
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের সময় তিনি পরিবারের অনেক সদস্যকে হারিয়েছেন, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, এখন এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে।
দক্ষিণ সুদানে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এখনো অনেক বাধা বিদ্যমান। স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা, বিশেষ করে গবাদি পশু চুরি এবং তরুণ দলের মধ্যে সংঘর্ষ প্রায়ই দেখা যায়।
২২ বছর বয়সী আকোল নামের এক যুবক, যিনি ১৭ বছর বয়স থেকে একটি স্থানীয় গ্যাংয়ের সদস্য, বলেন, “আমার যদি একটি কাজ থাকত, তাহলে আমি গ্যাংয়ে যোগ দিতাম না।
আমাদের কোনো কাজ নেই, টাকা নেই, এমনকি স্কুলে যাওয়ার মতো কোনো সুযোগও নেই।”
আকোলের মতে, মালকালের গ্যাংগুলো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর তরুণদের নিয়ে গঠিত, তবে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য এবং উদ্বাস্তু জীবনের কষ্টগুলো মিল রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা উপজাতিগত কারণে মারামারি করি না, বরং টিকে থাকার জন্য লড়াই করি।”
অনেক তরুণের কাছে গ্যাংয়ের জীবন দক্ষিণ সুদানের অস্থিরতার একটি কারণ, আবার এটি একটি উপসর্গও বটে।
তবে, শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তরুণরাই সবচেয়ে বেশি আশাবাদী। লুনিয়া ওকুচের মতো নেতারা বিভেদ দূর করতে, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া তৈরি করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
দেশ পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের দায়িত্ব শুধু তরুণদের একার নয়। আপার নীল রাজ্যের ১৩টি কাউন্টির নারী প্রতিনিধি নিয়ার মন্যাকুয়ানি এবং তাঁর মতো আরও অনেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, “নারীরাও শান্তি দূত হতে পারে।” তিনি মালকালের বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে পারস্পরিক বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
তিনি স্থানীয় একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন, যা বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়ক হচ্ছে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। ইয়েই শহরের একজন নির্মাণ শ্রমিক জোয়েল জন জানান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি তাঁকে পরিবারের জন্য উপার্জনের সুযোগ করে দিয়েছে।
তিনি প্রতিবেশী দেশ উগান্ডায় উদ্বাস্তু জীবন কাটানোর পর এখন নিজের জীবন নতুন করে সাজাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি এই কাজটি বেছে নিয়েছি, কারণ এর মাধ্যমে আমি আমার জীবন পুনর্গঠন করতে পারব।”
তবে, গ্রামীণ অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তিনি উদ্বিগ্ন, যা শহরগুলোতে অর্জিত অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারে।
২০১৮ সালের শান্তি চুক্তি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতার মূল কারণগুলো এখনো বিদ্যমান।
জাতিগত বিভাজন, ভূমি বিরোধ এবং সম্পদের অভাব প্রায়ই সংঘাতের জন্ম দেয়, বিশেষ করে বন্যা ও বাস্তুচ্যুতির কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর মতো বিভিন্ন সংগঠন স্থানীয় সংলাপ এবং তৃণমূল পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
মালকাল এবং ইয়েইয়ের জনগণের ধারাবাহিক প্রচেষ্টাই প্রমাণ করে, দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা