যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে কি হারিয়ে যাচ্ছে আঞ্চলিক ভাষা?
আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অঞ্চলের মানুষের কথাবার্তার নিজস্ব একটা ধরন বা টান রয়েছে, যা তাদের আঞ্চলিক পরিচয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে, এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভাষারীতি ক্রমশ কমতে শুরু করেছে।
অভিবাসন, নগরায়ন এবং আঞ্চলিক পরিচয় সম্পর্কে মানুষের ধারণা পরিবর্তনের ফলে এমনটা ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভাষার এই পরিবর্তন শুধু একটি অঞ্চলের গল্প নয়, বরং বিশ্বায়নের যুগে ভাষার ওপর পরিবর্তনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আটলান্টা, র্যালে এবং নিউ অরলিন্সের মতো শহরগুলোতে এই পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একসময় আটলান্টায় শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে প্রচলিত যে বিশেষ ধরনের ভাষা ছিল, তা এখন আগের মতো শোনা যায় না।
র্যালিতেও একই চিত্র দেখা যায়। এখানকার ‘রিসার্চ ট্রায়াঙ্গেল পার্ক’ নামে পরিচিত গবেষণা ও প্রযুক্তি বিষয়ক একটি বিশাল এলাকা তৈরি হওয়ার পর, বাইরের রাজ্য থেকে আসা বহু শিক্ষিত মানুষের কারণে স্থানীয় ভাষারীতিতে পরিবর্তন আসে।
অন্যদিকে, নিউ অরলিন্সে হারিকেন ক্যাটরিনার ভয়াবহতার পর সেখানকার ‘ইয়াত’ নামে পরিচিত একটি বিশেষ ভাষারীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
ভাষাবিদদের মতে, ভাষার এই পরিবর্তন মূলত ঘটে অভিবাসনের কারণে। বিশেষ করে, বাইরের রাজ্য থেকে আসা মানুষেরা যখন একটি অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে, তখন তাদের ভাষার প্রভাব স্থানীয়দের উপর পড়তে শুরু করে।
এছাড়া, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আঞ্চলিক ভাষার প্রতি আগ্রহ কমার একটি কারণ হলো, তারা নিজেদেরকে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখতে চায় না। তারা চায় তাদের কথা বলার ধরন যেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, যা তাদের ভৌগোলিক গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আশির দশকের শেষের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম একটি বিশেষ ধরনের ভাষারীতি চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে এটি বোস্টন, নিউ ইয়র্ক এবং মিশিগানের মতো বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং সেখানকার আঞ্চলিক ভাষারীতিকে প্রভাবিত করে।
আঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তনের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো, অতীতে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষ কাজের সন্ধানে উত্তর আমেরিকার শহরগুলোতে পাড়ি জমিয়েছিল। এই ঘটনা ‘গ্রেট মাইগ্রেশন’ নামে পরিচিত।
তাদের বংশধররা আবার দক্ষিণাঞ্চলে ফিরে আসতে শুরু করে, যা ‘রিভার্স গ্রেট মাইগ্রেশন’ নামে পরিচিত। এই পরিবর্তনের ফলে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষারীতিতেও ভিন্নতা দেখা যায়।
তবে, ভাষার পরিবর্তন হলেও, এটি সম্ভবত পুরোপুরি হারিয়ে যাবে না। কারণ, আঞ্চলিক ভাষা মানুষের পরিচয় প্রকাশের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
ভাষা পরিবর্তন হয়তো তরুণ প্রজন্মের মানুষেরা কীভাবে তাদের অঞ্চলের পরিচয় দেয়, সেই ধারণার পরিবর্তনের ফল। তারা হয়তো তাদের পূর্বপুরুষদের মতো করে নিজেদেরকে দক্ষিণের মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।
তাদের কাছে আঞ্চলিক সীমানা হয়তো আগের প্রজন্মের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস।