আকাশপথে ভয়ঙ্কর বিপদ! যা জানালে চমকে উঠবেন…

মহাকাশে বেড়ে চলা আবর্জনার কারণে বিমান চলাচলে বাড়ছে মারাত্মক ঝুঁকি। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা পরিত্যক্ত বিভিন্ন বস্তুকণা বা ‘স্পেস ডেব্রিজ’ বিমানের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বিজ্ঞান বিষয়ক একটি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, এই ধরনের মহাকাশ আবর্জনা বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে তা বিপর্যয়কর হতে পারে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি ঘনবসতিপূর্ণ আকাশপথে মহাকাশ আবর্জনা আসার সম্ভাবনা বাড়ছে।

যদিও বিমানের সঙ্গে এসব বস্তুর সরাসরি সংঘর্ষের ঘটনা এখনো বিরল, তবে এই ঝুঁকি ক্রমাগত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোর কাছাকাছি অঞ্চলে প্রতি বছর ০.৮ শতাংশ হারে মহাকাশ আবর্জনা জমা হচ্ছে।

আর উত্তর-পূর্ব আমেরিকা, উত্তর ইউরোপ অথবা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বড় শহরগুলোর আকাশপথে এই হার ২৬ শতাংশ পর্যন্ত।

বিমান চলাচলের নিরাপত্তা বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (International Air Transport Association) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতি ৪ লাখ ৫৬ হাজার ফ্লাইটে একটি দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে।

যেখানে ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতি ৮ লাখ ১০ হাজার ফ্লাইটে একটি দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। বিমান সংস্থাগুলো যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা একটি বিষয় হলো মহাকাশের আবর্জনা।

গবেষকরা বলছেন, সামান্য ওজনের একটি বস্তুকণা বিমানের ক্ষতি করতে পারে। তাদের মতে, এক গ্রাম ওজনের কোনো ধ্বংসাবশেষ বিমানের উইন্ডশীল্ডে আঘাত করলে অথবা ইঞ্জিনে প্রবেশ করলে তা গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।

এমনকি ৯ গ্রাম ওজনের একটি স্টিলের টুকরা বিমানের কাঠামোতে ছিদ্র করতে পারে। আর ৩০০ গ্রামের বেশি ওজনের কোনো ধ্বংসাবশেষের কারণে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, যা বিমানের সম্পূর্ণ ক্ষতির কারণ হতে পারে।

আকাশপথে বিমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই ঝুঁকি আরও বাড়ছে। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দৈনিক ফ্লাইটের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

একই সময়ে, পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা ‘শনাক্তযোগ্য বস্তুর’ সংখ্যাও গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। গবেষকরা তাই মহাকাশ মিশনগুলোর নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বলছেন।

তাদের পরামর্শ হলো, প্রতিটি মহাকাশ মিশন শেষে রকেট বা অন্যান্য সরঞ্জাম একটি নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সমুদ্রের গভীরে ফিরিয়ে আনা উচিত।

বর্তমানে, ৩৫ শতাংশেরও কম উৎক্ষেপণে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। গবেষকদের মতে, এই নিয়ম সার্বিকভাবে কার্যকর করা গেলে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

২০২২ সালে প্রায় ২০ টন ওজনের একটি রকেট পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় এর প্রমাণ পাওয়া যায়। এটির সম্ভাব্য অবতরণের স্থান হিসেবে দক্ষিণ ইউরোপকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

এর ফলে ফ্রান্স ও স্পেনের কর্তৃপক্ষ তাদের আকাশপথ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬৪৫টি বিমানের যাত্রা বিলম্বিত হয় এবং কিছু বিমানকে অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া, প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে ইতালি, পর্তুগাল ও গ্রিসে বিমান চলাচলে চাপ বাড়ে। গবেষকরা মনে করেন, দ্রুত নীতিগত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো দুর্ঘটনা বা বিশৃঙ্খলা এড়ানো যায়।

তথ্যসূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *