মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত, মেরু অঞ্চলের ওপর দিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে স্পেসএক্সের বিশেষ মিশন।
মহাকাশ গবেষণায় আরও এক ধাপ এগিয়ে, প্রথমবারের মতো পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলের ওপর দিয়ে একটি বিশেষ মহাকাশ মিশন পরিচালনা করতে যাচ্ছে স্পেসএক্স। এই মিশনে অংশ নিচ্ছেন চারজন নভোচারী, যাদের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নেয়ার।
এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো, মানুষের শরীরে মহাকাশ ভ্রমণের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা।
ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণ হতে যাওয়া এই মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাল্টায় বসবাসকারী বিনিয়োগকারী, চুন ওয়াং। তিনি এই অভিযানের জন্য স্পেসএক্সকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন।
ওয়াংয়ের সঙ্গে আরও তিনজন অভিজ্ঞ পোলার এক্সপ্লোরার এই মিশনে যোগ দিচ্ছেন। তারা হলেন নরওয়েজিয়ান চলচ্চিত্র পরিচালক জ্যানিক মিক্কেলসেন, জার্মান রোবোটিক্স গবেষক রাবিয়া রোগে এবং অস্ট্রেলিয়ান অভিযাত্রী এরিক ফিলিপস।
উল্লেখ্য, এই নভোচারীদের কেউই আগে কখনো মহাকাশে যাননি।
মিশনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ফ্রেম২’। ফ্রেম ছিল বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে অভিযান চালানো একটি নরওয়েজিয়ান জাহাজের নাম।
এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো মেরু অঞ্চলের আকর্ষণীয় দৃশ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করা এবং মানুষের শরীরের ওপর মহাকাশ ভ্রমণের প্রভাবগুলো নিবিড়ভাবে গবেষণা করা।
যেমন, ওজনহীনতার সঙ্গে শরীর কীভাবে মানিয়ে নেয়, অথবা মহাকাশ ভ্রমণের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা (motion sickness) থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী, তা খুঁজে বের করা।
এই মিশনে নভোচারীরা তাদের শরীরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দেবেন, যা বিজ্ঞানীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই গবেষণা থেকে মহাকাশ ভ্রমণের সময় মানুষের ঘুমের ধরন, নারীদেহে হরমোনের পরিবর্তন এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।
এই মিশনে তারা বিশেষভাবে মেরু অঞ্চলের আলো, যা ‘অরোরা’ নামে পরিচিত, তার ছবি তুলবেন।
এছাড়া, মহাশূন্যে মাশরুম চাষ করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ এই মিশনের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের মতে, মেরু অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে মিশনের অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হতে পারে, তবে এর থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো বৈজ্ঞানিক সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে, এই মিশনটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মহাকাশ ভ্রমণের ধারণাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
এটি বাণিজ্যিক মহাকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
এই মিশনে অংশগ্রহণকারীরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে ভবিষ্যতে মহাকাশ ভ্রমণের আরও উন্নত ব্যবস্থা তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।
ফ্রেম২ মিশনটি প্রায় তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত মহাকাশে অবস্থান করবে এবং ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে অবতরণের মাধ্যমে এটি শেষ হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন