বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দায়: স্পেন ইস্যুতে মন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারি!

স্পেনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট: নবায়নযোগ্য শক্তির ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা

গত সোমবার স্প্যানিশ উপদ্বীপ জুড়ে এক ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দেয়, যা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

এই ঘটনার পর নবায়নযোগ্য শক্তি এবং গ্রিড স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।

সোমবারের এই বিভ্রাটের কারণ অনুসন্ধানে নেমেছে স্পেন সরকার। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে ১৫ গিগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ ৫ সেকেন্ডের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, যা দেশটির মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ।

এই ঘটনার জন্য অনেকে নবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরশীলতাকে দায়ী করছেন। তবে স্পেনের পরিবেশমন্ত্রী সারা অ্যাজেসেন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি জানান, ঘটনার সময় দেশটির বিদ্যুতের প্রায় ৫৫ শতাংশ আসছিল সৌরবিদ্যুৎ থেকে, ১০ শতাংশ বায়ুবিদ্যুৎ, ১০ শতাংশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ এবং ১০ শতাংশ জলবিদ্যুৎ থেকে।

এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর নীতির সমালোচনা করছে এবং এর ফলে গ্রিডের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভ্রাটের কারণ এখনো নিশ্চিত নয় এবং খুব শীঘ্রই একটি বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই ঘটনার জন্য বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর সহায়তা চেয়েছেন।

স্পেনের সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের মোট বিদ্যুতের ৮১ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত বছর, দেশটির মোট বিদ্যুতের ৫৬ শতাংশ এসেছিল নবায়নযোগ্য উৎস থেকে।

এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে গ্রিড স্থিতিশীলতা বজায় রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ অনুসন্ধানে রেড এলétrica (Red Eléctrica) নামক জাতীয় গ্রিড পরিচালনাকারী সংস্থার প্রেসিডেন্ট বিয়াত্রিজ কোরেডর জানিয়েছেন, তারা ঘটনার কারণ সম্পর্কে অবগত আছেন এবং দ্রুতই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, নবায়নযোগ্য শক্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করতে সক্ষম।

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। আমাদের দেশেও বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে এবং সরকার নবায়নযোগ্য শক্তির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

বর্তমানে, বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানির পাশাপাশি জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ুবিদ্যুৎ-এর ব্যবহার বাড়ছে। ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার আরও বাড়াতে হলে গ্রিড ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হবে।

একইসঙ্গে, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুতের মিশ্রণ (energy mix) তৈরি করা অপরিহার্য। স্পেন সরকারের এই তদন্ত এবং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাতে পারবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *