যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে স্পেনের বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত!

স্পেন ইসরায়েলের থেকে ৬.৬ মিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৭৮ কোটি টাকার বেশি) একটি অস্ত্রের চালান বাতিল করেছে। দেশটির জোট সরকারের কট্টর বামপন্থী দল এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করার পরেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

দলটির অভিযোগ ছিল, এই অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে স্পেনের অবস্থানের পরিপন্থী।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে শুরু থেকেই কঠোর সমালোচনা করে আসছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের হতাহতের সংখ্যাকে ‘অসহনীয়’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।

গত বছর স্পেন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, যা ইসরায়েলের প্রতি তাদের কঠোর মনোভাবেরই প্রমাণ। হামাসের ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামলার পর থেকে স্পেন ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বা তাদের কাছ থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ করে দিয়েছে।

যদিও, প্রথমে স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি কোম্পানি IMI Systems থেকে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ রাউন্ড গুলি কেনার পক্ষে ছিল। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল, চুক্তিটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে এবং বাতিল করা কঠিন।

তাছাড়া, বাতিল করলে স্প্যানিশ সিভিল গার্ড (জাতীয় পুলিশ বাহিনী) তাদের দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয় গুলি থেকে বঞ্চিত হবে।

কিন্তু এই চুক্তির খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই স্পেনের বামপন্থী দল সুমারের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে। দলের নেতারা অবিলম্বে চুক্তি বাতিলের দাবি জানান।

সুমারের নেতারা সরাসরি অভিযোগ করেন, “একটি গণহত্যায় জড়িত রাষ্ট্রকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।” যদিও ইসরায়েল গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।

এই অস্ত্র চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সানচেজের দল সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গে সুমারের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়। এর আগে, স্পেনের প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করার বিষয়েও দুই দলের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।

ন্যাটোর সদস্যপদ ধরে রাখতে স্পেন এই অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইছে। সুমারের মতে, এই পদক্ষেপ ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ এবং ‘অতিরিক্ত’ ছিল।

বৃহস্পতিবার সকালে, প্রধানমন্ত্রী সানচেজ এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্ডা ডিয়াজের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, চুক্তিটি বাতিল করা হবে এবং অস্ত্রের আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না।

সরকার জানায়, এই বিষয়ে “আলোচনার সমস্ত পথ” ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তারা আরও জানায়, বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে।

সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, ” প্রগতিশীল জোট সরকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পক্ষে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে কারণেই স্পেন ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র কিনবেও না, তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রিও করবে না।”

সূত্র আরও যোগ করে জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে ইসরায়েলের সঙ্গে করা যেসব অস্ত্রের চুক্তি এখনো পূরণ হয়নি, সেগুলোও বাতিল করা হবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *