স্পেনে পর্যটকদের ‘অত্যাচার’, জল কামান হাতে রাস্তায় নামল স্থানীয়রা!

বার্সেলোনার আকাশে বাড়ছে পর্যটনের ঝাঁজ, বাড়ছে সংকট: ঘর হারানোর শঙ্কায় স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্পেনের বার্সেলোনায় পর্যটনের বাড়বাড়ন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় ফেলেছে গভীর প্রভাব। একদিকে যেমন বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা, তেমনি বাড়ছে বাড়ি ভাড়াও। এর ফলে, শহরের অনেক বাসিন্দা, বিশেষ করে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত চেমা এসকর্সার মতো মানুষেরা, নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

তাদের মতে, পর্যটনের এই বিপুল স্রোত যেন তাদের শহরটিকে গ্রাস করতে চাইছে।

বার্সেলোনার গ্রাসিয়া এলাকার বাসিন্দা চেমা এসকর্সা জানান, তার পরিচিত প্রতিবেশীরা এখন আর আগের মতো নেই। তাদের জায়গায় এসেছে পর্যটকদের অবিরাম আনাগোনা।

তার শিক্ষকতার সামান্য বেতনে তাই বাড়ছে না, বরং কমছে, এমনটাই মনে হচ্ছে। দুই কামরার ফ্ল্যাটটিতে তিনি জানান, “ভবিষ্যতে কি করব, ভেবে পাচ্ছি না। শহর ছেড়ে গেলে কি বার্সেলোনার আসল পরিচয়টাই হারিয়ে যাবে? কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, আর পারছি না।”

শুধু বার্সেলোনা নয়, স্পেনের অন্যান্য শহরগুলোতেও একই চিত্র। মাদ্রিদ, মায়োর্কা, ইবিজা সহ ভেনিস, লিসবনের মতো শহরগুলোতে পর্যটনের আধিক্যের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর প্রতিবাদে সম্প্রতি বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে জল কামান ব্যবহার করেছেন, যা পর্যটকদের প্রতি তাদের অসন্তোষের প্রতীক হিসেবে দেখা গেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, স্পেনে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। ২০২২ সালের জুন মাসে যেখানে মাত্র ২ শতাংশ স্প্যানিয়ার্ড মনে করতেন আবাসন একটি জাতীয় সমস্যা, সেখানে বর্তমানে প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন এটি একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয়।

শুধু তাই নয়, ২০২৩ সালে স্পেন প্রায় ৯ কোটি ৪০ লক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যটকের আগমন দেখেছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ১০ কোটিতে পৌঁছতে পারে।

পর্যটকদের জন্য স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার ব্যবস্থা করা নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। এই ধরনের ভাড়ার জন্য অনুমতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বার্সেলোনা কর্তৃপক্ষ।

২০২৮ সালের মধ্যে তারা প্রায় ১০ হাজার স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার অনুমতি বাতিল করার পরিকল্পনা করছে। এর ফলে, পর্যটকদের আবাসনের সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে।

স্পেনের কনজিউমার রাইটস বিষয়ক মন্ত্রী পাবলো বুস্টিনদুই জানিয়েছেন, পর্যটনখাত স্প্যানিশ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করতে পারে না। তাদের আবাসন এবং জীবনযাত্রার অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।

অন্যদিকে, দেশটির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী কার্লোস কুয়ের্পোও স্বীকার করেছেন যে, অতিরিক্ত পর্যটনের কিছু খারাপ দিক রয়েছে এবং তা মোকাবিলা করতে হবে।

তবে, স্বল্পমেয়াদী ভাড়ার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মনে করেন, তাদের অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে। তাদের মতে, আবাসন এবং পর্যটনের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগুলির দুর্বলতার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

পর্যটনের এই ক্রমবর্ধমান চাপ বাংলাদেশের জন্যও একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কক্সবাজারের মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও যদি পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান এবং আবাসন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

একইসঙ্গে, ঢাকার মতো শহরেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আবাসনের সংকট দেখা যায়। তাই, পর্যটনের সুবিধাগুলি নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের অধিকার ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করার দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *