মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে (House of Representatives) প্রক্সি ভোটিং নিয়ে রিপাবলিকান দলের মধ্যে তীব্র বিভেদ দেখা দিয়েছে। এই বিভেদের মূল কারণ হলো নবীন অভিভাবকদের জন্য দূর থেকে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া না দেওয়া নিয়ে স্পিকার মাইক জনসন এবং দলের সদস্য আনা পাওলিনা লুনার মধ্যে বিরোধ।
ফ্লোরিডার কংগ্রেসম্যান আনা পাওলিনা লুনা, যিনি গত বছর সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, তিনি চান নতুন বাবা-মায়ের ভোটের সুবিধার্থে দূর থেকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু স্পিকার জনসন এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন।
তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এই ধরনের ভোট দেওয়া সাংবিধানিকভাবে সঠিক নয়। এই নিয়ে জনসনের এই অবস্থানের কারণে দলের অনেক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, স্পিকারের এই পদক্ষেপ পরিবার-বিরোধী। জানা গেছে, স্পিকার জনসনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দলের কয়েকজন সদস্য আগামী মঙ্গলবার হাউজে ভোটাভুটিতে তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন।
রিপাবলিকান দলের মধ্যে জনমত এতটাই বিভক্ত যে, বিষয়টি এখন বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। দলের হুইপ টম এমমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা লুনার প্রস্তাব সমর্থন করবেন না।
এদিকে, আনা পাওলিনা লুনা জানিয়েছেন, তার পক্ষে অন্তত চারজন রিপাবলিকান সদস্য রয়েছেন যারা ভোটাভুটিতে তার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন। যদিও এখনো পর্যন্ত কতজন সদস্য জনসনের বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, তা স্পষ্ট নয়।
এই বিতর্কের কারণে, লুনা সম্প্রতি কট্টর রক্ষণশীল দল ফ্রিডম ককাস থেকেও বেরিয়ে এসেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনসনের এই অনমনীয়তার পেছনে দলের সংকীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও একটি কারণ।
কারণ, দলের সদস্যরা যদি কোনো কারণে সভায় উপস্থিত থাকতে না পারেন, তবে ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য কাট ক্যামাক বর্তমানে সন্তানসম্ভবা এবং টেক্সাসের প্রতিনিধি ব্র্যান্ডন গিলের স্ত্রীও খুব শীঘ্রই সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন।
এই প্রক্সি ভোটিংয়ের বিষয়টি অনেক রিপাবলিকানের কাছে ব্যক্তিগত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, রিপাবলিকান প্রতিনিধি ওয়েসলি হান্ট এক ব্যক্তিগত আলোচনায় স্পিকার জনসনকে জানান যে, তার ছেলের অসুস্থতার সময় তিনি যখন ওয়াশিংটনে ১৬ বার গিয়েছিলেন, সেটিই তার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ।
হান্ট মঙ্গলবার তার ছেলেকে সাথে নিয়ে হাউজের ফ্লোরে আসতে পারেন এবং জনসনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রিপাবলিকান নেতারা সাধারণত এই ধরনের ভোটিং প্রক্রিয়ার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেন না।
কিন্তু এবার স্পিকার জনসন এবং টেক্সাসের প্রতিনিধি চিপ রয় ব্যক্তিগতভাবে রিপাবলিকান সদস্যদের ফোন করে লুনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। যদি রিপাবলিকান নেতারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করেন, তাহলে লুনার প্রস্তাবটি এই সপ্তাহেই হাউজের ফ্লোরে তোলা হতে পারে।
এমতাবস্থায়, দলের মধ্যে এই বিভেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে আরও কঠিন করে তুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তথ্য সূত্র: সিএনএন