আল কায়েদা যোদ্ধা: যেভাবে জন্ম নিলো স্পিন ঘুলের জিহাদি পরিচয়!

সৌদি আরবের রাস্তা থেকে আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ শিবিরে: স্পিন ঘুলের জঙ্গি হয়ে ওঠার গল্প

ছোটবেলা থেকেই জিহাদের প্রতি আকর্ষণ ছিল স্পিন ঘুলের। তাঁর জন্ম সৌদি আরবে, যদিও তাঁর বাবা-মা ছিলেন নাইজারের নাগরিক। ১৯৮০-র দশকে আফগান যুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন থেকেই তিনি ইসলামি যোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী শুনে এসেছেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে মুজাহিদীনদের লড়াই তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। চেচেন বিদ্রোহের ঘটনাও তাঁর মনে গভীর দাগ কাটে।

২০০০ সালে স্পিন ঘুলের বন্ধু আমরান তাঁকে একটি সামরিক ম্যাগাজিন দেয়। ম্যাগাজিনটিতে বিমানের ছবি এবং পেন্টাগনের ছবি দেখে স্পিন ঘুল জানতে চান, কীভাবে তাঁরা বিমান হাইজ্যাক করে পেন্টাগনে আঘাত হানতে পারেন। আমরান তাঁকে কোনো উত্তর দেননি, কারণ আমরান ছিলেন সৌদি সরকারের একজন কর্মচারী।

এরপর স্পিন ঘুলের পরিচয় হয় সুলাইমানের সঙ্গে। সুলাইমান ছিলেন স্থানীয় জিহাদিদের মধ্যে পরিচিত একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯৮০-র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। সুলাইমানই স্পিন ঘুলকে জিহাদের পথে উৎসাহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে সাহায্য করেন।

সুলাইমানের মাধ্যমেই স্পিন ঘুলের পরিচয় হয় মাহিরের সঙ্গে। মাহির ছিলেন একজন সমন্বয়কারী। তাঁরা দু’জনে মিলে সৌদি আরব থেকে প্রথমে কাতারের দোহা, এরপর পাকিস্তানের করাচি হয়ে কোয়েটাতে পৌঁছান। সেখান থেকে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন তাঁরা।

আফগানিস্তানে পৌঁছে স্পিন ঘুল যোগ দেন আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত কিছু প্রশিক্ষণ শিবিরে। কান্দাহারের কাছে একটি গোপন আস্তানায় তিনি অন্যান্য নতুন যোদ্ধাদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানে আবদুল ফিদা আল-ইয়েমেনি নামের একজন আল-কায়েদা সদস্যের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। আবদুল ফিদা আল-ইয়েমেনি স্পিন ঘুলকে জানান, তিনি ‘শেখের’ (ওসামা বিন লাদেন) সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাঁরা আমেরিকায় আক্রমণের পরিকল্পনা করছেন।

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে, যখন আল-কায়েদা সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে হামলা চালায়, তখন স্পিন ঘুল এবং তাঁর সঙ্গীরা উল্লাস প্রকাশ করেন। এরপর তাঁদের কান্দাহার থেকে কয়েক ঘণ্টার দূরের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেন, যার মধ্যে ছিল কালাশনিকভ রাইফেল এবং আরপিজি-র মতো সোভিয়েত যুগের অস্ত্র।

প্রশিক্ষণ চলাকালীন স্পিন ঘুল বুঝতে পারেন, এই পথ মৃত্যুর দিকেও নিয়ে যেতে পারে। তাই তিনি আল-কায়েদার একজন নেতা আবদুল হাদি আল-ইরাকির কাছে নিজের একটি ‘ওয়াসিয়্যাত’ (মৃত্যুর আগে দেওয়া বার্তা) রেকর্ড করার অনুমতি চান। এই বার্তায় তিনি তাঁর পরিবারের জন্য কিছু কথা লিখে যান, যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রচার করার কথা ছিল।

আল-ফারুক প্রশিক্ষণ শিবিরে স্পিন ঘুলের প্রশিক্ষণের সময় তাঁর সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন ১৯৯৮ সালে কেনিয়া ও তানজানিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলায় জড়িত মোহাম্মদ সাদিক ওদেহ এবং মোহাম্মদ রashed দাউদ আল-‘ওহালি। এছাড়াও ছিলেন ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় জড়িত কয়েকজন।

প্রশিক্ষণ শেষে স্পিন ঘুলকে ‘মাস্কার ৯’ নামের একটি ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মাইন ও মর্টার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নেন। এই ক্যাম্পেই তাঁর নতুন নাম হয় ‘স্পিন ঘুল’, যার অর্থ ‘সাদা গোলাপ’।

১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর, যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে, তখন আল-কায়েদা যোদ্ধাদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। স্পিন ঘুলকে একটি ছোট শহরে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *