খেলাধুলার বাজি: ক্রমবর্ধমান কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও কি বাজি ধরার জগৎ থেকে দূরে থাকবে লীগগুলি?
সাম্প্রতিক সময়ে বাস্কেটবল খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তাদের বাজি সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনাগুলো কি ক্রীড়া জগতে বাজি ধরার ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে? যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশন (এনবিএ)-এর খেলোয়াড় ও কোচদের জুয়া খেলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনা ক্রীড়া বিশ্বে নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
তবে, এই ধরনের ঘটনা সত্ত্বেও, খেলাধুলা বিষয়ক বিভিন্ন লীগ এবং তাদের সাথে যুক্ত স্পোর্টস গেমিং অ্যাপসগুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
যুক্তরাষ্ট্রে খেলাধুলায় বাজি ধরা একটি বিশাল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিভিন্ন খেলাধুলার লীগগুলোর স্পোর্টস গেমিং অ্যাপস-এর সাথে সরাসরি স্পনসরশিপ চুক্তি রয়েছে, যা প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে।
এই চুক্তিগুলো খেলার লীগ এবং দলগুলোর আর্থিক অবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর যখন বিভিন্ন রাজ্যে খেলাধুলায় বাজি ধরাকে বৈধতা দেওয়া হয়, তখন থেকেই স্পনসরশিপ চুক্তিগুলো দ্রুত বাড়তে শুরু করে। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান ক্রীড়া লীগ এবং অনেক দল এই ধরনের স্পনসরশিপ চুক্তিতে আবদ্ধ।
উদাহরণস্বরূপ, অ্যারিজোনা কার্ডিনালস (NFL), অ্যারিজোনা ডায়মন্ডব্যাকস (MLB), এবং ওয়াশিংটন উইজার্ডস (NBA) তাদের স্টেডিয়ামে বাজি ধরার স্থান তৈরি করতে চুক্তি করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে খেলাধুলায় প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজি ধরা হয়েছে, যা লটারির টিকিট থেকে বেশি। আমেরিকান গেমিং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বাজি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৩% বেশি।
এই অর্থের বেশিরভাগই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বাজি ধরার মাধ্যমে আসে, ক্যাসিনোতে নয়।
খেলাধুলায় বাজি ধরার এই বিশাল অঙ্কের টাকা দলগুলোর কোষাগারে জমা হচ্ছে। খেলা বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, বাজি ধরার এই নতুন উপার্জনের সুযোগ এখন সবাইকে আকৃষ্ট করছে।
স্পনসরশিপের মাধ্যমে আসা এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড়াও, বাজি ধরার কারণে দলগুলো আরও অনেক বেশি রাজস্ব আয় করে।
কারণ, বাজি ধরার সাইটগুলো খেলা চলাকালীন এবং খেলার আগের ও পরের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপন দেয়, যা সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর আয় বাড়ায়।
বাজি ধরার কারণে খেলাগুলোর সামগ্রিক রাজস্ব বৃদ্ধি পায়, যা সম্প্রচার এবং স্ট্রিমিং স্বত্ব চুক্তিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার যোগ করে।
দর্শক সংখ্যা কমে যাওয়ার এই যুগে, যেখানে বিনোদন মাধ্যমগুলো মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য লড়াই করছে, সেখানে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
তবে, এই বাজি সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিগুলো খেলাধুলার জগতে কিছু ঝুঁকিও তৈরি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, লীগগুলো যদি সতর্ক না হয়, তাহলে তারা তাদের খেলার সম্মানহানি করতে পারে।
অন্যদিকে, ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন (NCAA)-এর স্পোর্টস বুক-এর সাথে কোনো স্পনসরশিপ চুক্তি নেই। তবে, মার্চ মাসে অনুষ্ঠিতব্য তাদের বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট ‘মার্চ ম্যাডনেস’-এর দর্শকপ্রিয়তা থেকে তারা বিপুলভাবে উপকৃত হয়।
এই টুর্নামেন্টে বাজি ধরার মাধ্যমে প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার আয় হয়, যা তাদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
খেলাধুলায় বাজি ধরার বিষয়টি নতুন নয়। প্রাচীন অলিম্পিকেও বাজি ধরার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে, এখনকার বাজি ধরার ধরন আগের চেয়ে ভিন্ন। এখন খেলাধুলার ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়েও বাজি ধরা যায়, যা আগে সম্ভব ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশের খেলাধুলা এবং বাজি বিষয়ক নীতি নির্ধারকদের অনেক কিছু শেখার আছে। কারণ, বাংলাদেশে জুয়া খেলা আইনত নিষিদ্ধ।
খেলাধুলার স্বচ্ছতা এবং এর সাথে জড়িত আর্থিক বিষয়গুলো কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন