আজ বসন্তের শুরু! আর যা জানা দরকার…

বসন্তের আগমনের বার্তা: দিন ও রাতের সমতা এবং এর তাৎপর্য

বসন্ত ঋতু যেন প্রকৃতির এক অপরূপ রূপ নিয়ে আসে, যখন দিনের আলো ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে আর রাতের আঁধার কমে আসে। এই সময়ে, সারা বিশ্বে দিন ও রাতের মধ্যে এক দারুণ ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।

এই বিশেষ মুহূর্তটিকেই আমরা বলি ‘মহাবিষুব’ বা ‘বসন্তকালীন বিষুব’। এটি শুধু একটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা নয়, বরং এটি নতুন করে জীবন শুরুরও ইঙ্গিত বহন করে।

২০২৫ সালের ২০শে মার্চ, বৃহস্পতিবার, এই মহাবিষুব অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক সময় অনুযায়ী, এটি হবে সকাল ৯টা ১ মিনিটে (ইউটিসি)।

আমাদের বাংলাদেশের সময়ের সাথে এর হিসাব করলে, সময়টা হবে বিকেল ৩টা ১ মিনিট। বিষুবের এই সময়ে, পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে বসন্তের আগমন ঘটে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে শুরু হয় শরৎকাল।

আসলে, পৃথিবীর অক্ষটি নিজের কক্ষপথে ২৩.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকে। এর ফলে, সূর্যের আলো কোনো একটি গোলার্ধে বেশি বা কম সময় ধরে পড়ে, যা ঋতু পরিবর্তনের কারণ।

এই কারণে, বিষুবের সময় দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য প্রায় সমান থাকে, কারণ পৃথিবীর হেলানো অক্ষটি সূর্যের দিকে এমনভাবে থাকে যে উভয় গোলার্ধেই আলোর পরিমাণ সমান হয়।

এই সময়ে, উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে, যেমন- বাংলাদেশে, আবহাওয়ায় হালকা পরিবর্তন আসতে শুরু করে। শীতের বিদায় এবং গরমের আগমনী বার্তা জানান দেয় প্রকৃতি।

যদিও আমাদের দেশে ঋতু পরিবর্তনের এই প্রভাব অনেক ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে অনুভূত নাও হতে পারে, কিন্তু এর একটি সূক্ষ্ম প্রভাব অবশ্যই থাকে।

মহাবিষুবের ধারণাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ থেকে। ‘ইকুইনক্স’ শব্দের অর্থ হলো ‘দিন ও রাতের সমতা’। এই সময়ে, পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতে নানা ধরনের উৎসব ও উদযাপন হয়।

যেমন, জাপানে এই দিনটি ‘ভার্নাল ইক্যুইনক্স ডে’ হিসেবে পালিত হয়, যেখানে পরিবার একসাথে মিলিত হয় এবং ঐতিহ্যপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠান পালন করে।

আবার, ইরানের মানুষজন এই সময়ে ‘নওরোজ’ বা পার্সিয়ান নববর্ষ উদযাপন করে, যা নতুন দিনের সূচনা ও ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা নিয়ে আসে। চীনেও এই সময়ে বিশেষ কিছু খেলা ও খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়।

তবে, একটি মজার তথ্য হলো, বিষুবের দিনটিতে কিন্তু দিনের আলো সামান্য বেশি থাকে, রাতের তুলনায়। এর কারণ হলো, সূর্যের আলোকরশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রতিসরণের কারণে দিগন্তের নিচে থেকেও আমাদের চোখে দৃশ্যমান হয়।

সুতরাং, মহাবিষুব একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা প্রকৃতির নিয়ম এবং ঋতু পরিবর্তনের একটি অংশ। এটি শুধু একটি সময়ের হিসাব নয়, বরং এটি নতুন করে জেগে ওঠার, পরিবর্তনের এবং প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করারও একটি সুযোগ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *