শিরোনাম: ডিম পাড়ার পরে মায়ের মৃত্যু, অপ্রত্যাশিত বন্ধুর হাত ধরে বাড়ে স্কুইড শিশুদের জীবন
সমুদ্রের গভীরে, এক মনোমুগ্ধকর ঘটনার সাক্ষী থাকে প্রকৃতি। ওপালেসেন্ট স্কুইড নামক এক ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী, প্রজননের উদ্দেশ্যে মিলিত হয় ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলের কাছাকাছি।
এই সময়ে ঘটে এক আকর্ষণীয় দৃশ্য—পুরুষ স্কুইডদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পর, স্ত্রী স্কুইড তার ডিম ছাড়ে এবং তারপরই ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কিন্তু এখানেই গল্পের শেষ নয়।
মায়ের মৃত্যুর পর, ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়ার জন্য এক অপ্রত্যাশিত বন্ধুর আবির্ভাব হয়।
ডিম পাড়ার পর, স্ত্রী স্কুইড তার জীবন উৎসর্গ করে যায়। ডিমগুলো সাদাটে ক্যাপসুলের মধ্যে সজ্জিত থাকে, যেখানে প্রায় ৩০০টি ভ্রূণ একসঙ্গে বেড়ে ওঠে।
এই ডিমগুলো রক্ষা করার জন্য, প্রকৃতি অন্য এক ব্যবস্থা করে। বালুকাময় সমুদ্রতলে, এই ডিমগুলোর কাছে আসে *ক্যাপিটেলা ওভিনকোলা* নামক এক প্রকার সামুদ্রিক কীট।
বিজ্ঞানীরা এই কীটদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ মনে করেন, এরা স্কুইডের শিশুদের জীবন বাঁচানোর সহায়ক।
কীটগুলো ডিমের বাইরের আবরণ ভেদ করে ভেতরের জেলির মতো অংশ খেয়ে ফেলে, যার ফলে বাচ্চা স্কুইডদের সহজে ফুটতে সাহায্য হয়।
অন্যদিকে, কিছু বিজ্ঞানীর মতে, কীটদের এই কার্যকলাপ ক্ষতিকর। তাদের মতে, কীটদের কারণে ডিমের বাইরের আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অপরিণত স্কুইড শিশুরা সময়ের আগেই ফুটে বের হয়ে আসে, যা তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কীটদের উপদ্রব বেশি হলে, ডিমের ভেতরের উপাদান নষ্ট হয়ে যায় এবং বাচ্চা স্কুইড দুর্বল হয়ে জন্মায়।
এই বিতর্কের মাঝে, একটি বিষয় স্পষ্ট—স্কুইডের ডিম এবং *ক্যাপিটেলা ওভিনকোলা* কীটদের মধ্যে এক ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান।
কীটগুলো ডিমের মধ্যে আশ্রয় নেয় এবং ডিমের কিছু অংশ খেয়ে ফেলে। এর ফলে, হয়তো কিছু স্কুইড শিশুর জীবন রক্ষা হয়, আবার কারও কারও ক্ষেত্রে জীবনহানিও ঘটে।
সমুদ্রের এই জটিল জীববৈচিত্র্যে, প্রতিটি প্রাণীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা এখনো এই সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন।
তাদের আবিষ্কারগুলি সমুদ্রের পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে নতুন ধারণা তৈরি করতে সহায়ক হবে। পরিবেশ দূষণের কারণে *ক্যাপিটেলা* কীটদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যা এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
এই গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য, আমাদের সমুদ্র এবং তার বাসিন্দাদের সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে সাহায্য করে। সমুদ্রকে রক্ষা করা শুধু একটি দেশের নয়, বরং সারা বিশ্বের মানুষের দায়িত্ব।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক