বদলে গেল ছবি! আমেরিকার পুরনো শহর, এখন কর্মীদের পছন্দের জায়গা

ফ্লোরিডার একটি পুরনো শহর, যা একসময় পর্যটকদের আকর্ষণ ছিল, সেটি কীভাবে আমেরিকার অন্যতম প্রধান ‘রিমোট ওয়ার্ক’ কেন্দ্রে পরিণত হলো? সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাবগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সেন্ট অগাস্টিন শহরটি ‘নationsন’স ওল্ডেস্ট সিটি’ বা ‘জাতির প্রাচীনতম শহর’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ শতকে স্প্যানিশদের দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানকার ঐতিহাসিক স্থাপত্য, যেমন – টেরাকোটা রঙের ছাদ এবং খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার, পর্যটকদের কাছে আজও অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

তবে, অতিমারীর (COVID-19) পর থেকে এই শহরের চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে সেন্ট জনস কাউন্টিতে, যেখানে সেন্ট অগাস্টিন অবস্থিত, মাত্র ৮.৬ শতাংশ কর্মী বাড়ি থেকে কাজ করতেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটি প্রায় ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, গত পাঁচ বছরে এখানে দূর থেকে কাজ করার প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

এর ফলে, শহরটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান ‘রিমোট ওয়ার্ক’ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

এই পরিবর্তনের পেছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করেছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর কারণে যখন অনেক রাজ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল বন্ধ ছিল, তখন ফ্লোরিডা সরকার দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করে।

এর ফলে, অনেক মানুষ, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব, মধ্য-পশ্চিম এবং ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দারা, সন্তানদের উন্নত শিক্ষার জন্য এখানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ‘রিমোট ওয়ার্কার’ বা দূর থেকে কাজ করতে সক্ষম এমন পেশাজীবী।

সেন্ট জনস কাউন্টির চেম্বার অফ কমার্সের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্কট মেইনার্ডের মতে, “অনেক পরিবার, বিশেষ করে যারা উত্তর থেকে আসছিলেন, তাদের এখানকার জীবনযাত্রার মান বেশ আকর্ষণ করেছিল। এখানকার ভালো স্কুলগুলোর কারণেও অনেকে এখানে আসতে আগ্রহী হন।”

স্কট মেইনার্ড

তবে, এই পরিবর্তনের ফলে কিছু সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। নতুন বাসিন্দাদের আগমনের কারণে, বিশেষ করে যারা তুলনামূলকভাবে বেশি উপার্জন করেন, তাদের জন্য এখানে বাড়ির চাহিদা বেড়েছে। এর ফলস্বরূপ, স্থানীয় কর্মীদের জন্য বাসস্থান কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে সেন্ট অগাস্টিনে একটি বাড়ির গড় দাম ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার সমান)। ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ডলারে (প্রায় ৫ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা) দাঁড়িয়েছে।

চেম্বারের অর্থনৈতিক গবেষক আলিয়া মেয়ারের মতে, “বাইরের থেকে আসা মানুষেরা তাদের পুরনো বাড়ি বিক্রি করে এখানে নগদ অর্থ দিয়ে বাড়ি কিনছেন, যা বাজারকে আরও কঠিন করে তুলেছে।”

আলিয়া মেয়ার

এই পরিস্থিতিতে জরুরি বিভাগের কর্মী, যেমন – পুলিশ, দমকল কর্মী এবং শিক্ষকদের জন্য শহরে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারণ, তাদের পক্ষে ক্রমবর্ধমান মূল্যে বাড়ি কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

স্থানীয় চেম্বার অফ কমার্সের হিসাব অনুযায়ী, একটি পরিবারকে এখানে একটি বাড়ি কিনতে বছরে কমপক্ষে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ডলার (প্রায় ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা) আয় করতে হবে। যেখানে একজন শিক্ষকের গড় বেতন প্রায় ৪৮ হাজার ডলার (প্রায় ৫২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা) এবং একজন পুলিশ অফিসারের গড় বেতন প্রায় ৫৮ হাজার ডলার (প্রায় ৬৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা)।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের শহরগুলোর সঙ্গে অনেক অংশে মিলে যায়। বিশেষ করে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোতে গ্রামের মানুষজন কাজের খোঁজে এসে বসবাস করতে শুরু করেন। ফলে, সেখানেও জমির দাম বাড়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যায়।

অর্থাৎ, সেন্ট অগাস্টিনের এই পরিবর্তনের পেছনে একদিকে যেমন উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় কর্মীদের জন্য আবাসন সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *