সমুদ্রের তারা মাছ: এদের সম্পর্কে ১৩টি অসাধারণ তথ্য যা আপনি হয়তো জানেন না
সাগরের গভীরতা এবং তার বুকে লুকিয়ে থাকা জীববৈচিত্র্য সবসময়ই আমাদের কৌতূহলের বিষয়। আর এই সমুদ্রের এক চমৎকার প্রাণী হল তারা মাছ, যা দেখতে তারার মতো।
এদের সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যা শুনলে আপনি হয়তো অবাক হবেন! আসুন, আজ আমরা তারা মাছ সম্পর্কে ১৩টি মজাদার তথ্য জেনে নিই:
শারীরিক গঠন (Physical Structure)
১. তারা মাছের মস্তিষ্ক নেই: হ্যাঁ, তারা মাছের কোনো মস্তিষ্ক নেই! এদের স্নায়ুতন্ত্র শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকে।
প্রতিটি বাহু নিজস্বভাবে কাজ করতে পারে, তবে অন্য বাহুগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ও বজায় রাখে।
২. রক্ত নয়, নোনা জল: তারা মাছের শরীরে রক্তের পরিবর্তে নোনা জল প্রবাহিত হয়। এদের শরীরে একটি বিশেষ ছিদ্র থাকে, যাকে ম্যাড্রেপোরিট (madreporite) বলা হয়।
এই ছিদ্রের মাধ্যমেই জল তাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করে।
আশ্চর্যজনক ক্ষমতা (Amazing Abilities)
৩. অঙ্গ পুনরুৎপাদন ক্ষমতা: তারা মাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এদের অঙ্গ পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতা। কোনো কারণে যদি তারা মাছের একটি বাহু ছিঁড়ে যায়, তবে সেটি আবার গজিয়ে ওঠে।
এমনকি কিছু তারা মাছ তাদের বাহু বিচ্ছিন্ন করে নতুন তারা মাছও তৈরি করতে পারে!
৪. তারা মাছ কি মাছ? : তারা মাছ মোটেও মাছ নয়! এরা ‘একিনোডার্মাটা’ (Echinodermata) পর্বের অন্তর্ভুক্ত, যার অর্থ ‘কাঁটাযুক্ত চামড়া’। তারা মাছের ফুলকা, আঁশ বা পাখনা নেই, যা মাছের বৈশিষ্ট্য।
৫. বহিঃস্থ পরিপাক ক্রিয়া: তারা মাছ শিকারের জন্য তাদের পাকস্থলী দেহের বাইরে বের করে আনে। এরপর শিকারের নরম অংশ হজম করে, যা অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো!
৬. চোখের সন্ধান: তারা মাছের বাহুর ডগায় তাদের চোখ থাকে। এগুলো আলোর উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারে।
৭. গভীর সমুদ্রের তারা মাছের আলো: কিছু গভীর সমুদ্রের তারা মাছ অন্ধকারে আলো তৈরি করতে পারে।
৮. স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা: তারা মাছ তাদের পায়ের মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ করে। তাদের পায়ের মাধ্যমে তারা পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারে এবং খাদ্য খুঁজে বের করতে পারে।
৯. বর্জ্য নিষ্কাশন প্রক্রিয়া: তারা মাছ তাদের পায়ের মাধ্যমে বর্জ্য ত্যাগ করে!
গঠনগত বৈশিষ্ট্য (Structural characteristics)
১০. তারা আকারের কারণ: তারা মাছের শরীর ‘অরীয় প্রতিসাম্য’ (radial symmetry) দ্বারা গঠিত। এর মানে হল, এদের অঙ্গগুলো একটি কেন্দ্র থেকে চারপাশে বিস্তৃত থাকে।
সাধারণত এদের পাঁচটি বাহু থাকে, তবে কিছু প্রজাতিতে এর চেয়ে বেশিও থাকতে পারে।
১১. বিভিন্ন আকার ও রং: তারা মাছ বিভিন্ন রঙ ও আকারের হয়ে থাকে। এই বৈচিত্র্য তাদের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং শিকারী প্রাণীদের থেকে বাঁচতে সাহায্য করে।
১২. কঠিন ত্বক: তারা মাছের ত্বক শক্ত এবং কাঁটাযুক্ত হয়ে থাকে। এই ত্বক তাদের শিকারী প্রাণী এবং ক্ষতিকারক পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।
পরিবেশের ভূমিকা (Role in the Environment)
১৩. বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা: তারা মাছ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরা শামুক জাতীয় প্রাণী খেয়ে তাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রবাল প্রাচীর এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের জন্য উপকারী।
সুতরাং, তারা মাছ শুধু দেখতে সুন্দর নয়, বরং তারা খুবই আকর্ষণীয় এবং বিস্ময়কর প্রাণী। গভীর সমুদ্রের এই বাসিন্দারা প্রকৃতির এক দারুণ উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure