মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এখন তাদের সড়ক পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে নতুন এক পথের সন্ধান করছে। তারা চাইছে মহাসড়ক সম্প্রসারণের বদলে গণপরিবহন, সাইকেল চালনার সুযোগ বৃদ্ধি এবং পরিবেশবান্ধব প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দিতে।
এর পেছনে মূল কারণ হলো ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে সম্ভাব্য তহবিল হ্রাস এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর জরুরি প্রয়োজনীয়তা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, ইলিনয়, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নিউইয়র্ক এবং পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যগুলো একত্রিত হয়ে ‘ক্লিন রাইডস নেটওয়ার্ক’ নামে একটি জোট গঠন করেছে। এই নেটওয়ার্কের মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশ-সংক্রান্ত পরিবহন প্রকল্পগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে ফেডারেল সরকারের সমর্থন বর্তমানে দুর্বল হতে দেখা যাচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ডেনভার শহর বাইডেন প্রশাসনের সময়ে একটি দ্রুতগতির বাস লাইন তৈরি করার জন্য ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফেডারেল অনুদান পেয়েছিল।
পরিবহন খাতে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যগুলোর এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক লাভ—উভয় কারণ। কলোরাডো অঙ্গরাজ্য এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তারা তাদের পরিবহন বিভাগকে নতুন মহাসড়ক প্রকল্প গ্রহণ করার সময় পরিবেশগত ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করে। এর ফলে, দুটি বড় মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্প বাতিল করতে হয়।
সেই অর্থ ব্যবহার করে কলোরাডো আন্তঃনগর বাস পরিষেবা বৃদ্ধি করেছে, যা শহরবাসী এবং পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কলোরাডোর এই পদক্ষেপ অনুসরণ করে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যও একই ধরনের নিয়ম তৈরি করেছে।
মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতারা কলোরাডোর আদলে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এর মূল উদ্দেশ্য হলো পরিবেশগত সুবিধার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নতি নিশ্চিত করা।
কলোরাডো পরিবহন বিভাগের একটি সমীক্ষা বলছে, উন্নত বায়ুমান, সড়ক নিরাপত্তা এবং যানজট হ্রাসের মাধ্যমে প্রায় $৪০ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা সম্ভব।
অবশ্য, এই পরিবর্তনে সবার সমর্থন মিলছে না। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সড়ক ও পরিবহন নির্মাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইক স্টুরিনো মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ রাজ্যের অবকাঠামো উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে।
যদিও এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছেন ডেমোক্রেট দলের নেতারা, তবে ক্লিন রাইডস নেটওয়ার্কের মতে, কিছু রক্ষণশীল অঙ্গরাজ্যও এই বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
কারণ, পরিবহন খরচ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার স্বাধীনতা রয়েছে। তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নীতি পরিবর্তন করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ভার্জিনিয়া তাদের পরিবহন প্রকল্পগুলোকে নিরাপত্তা, যানজট হ্রাস এবং পরিবেশগত প্রভাবের মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি এই বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়, তাহলে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি, যানজট নিরসন এবং পরিবেশ দূষণ রোধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্যগুলোর পদক্ষেপ একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
আমাদের দেশেও পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।