স্ট্যাটিন: ইন্টারনেটে ভিলেন, নাকি উপকারী?

হৃদরোগ এখন শুধু বয়স্কদের রোগ নয়, বরং একটি উদ্বেগের বিষয়।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে কম বয়সীদের মধ্যেও এই রোগের প্রবণতা বাড়ছে।

তাই হৃদরোগ থেকে বাঁচতে হলে সচেতনতা জরুরি, বিশেষ করে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখাটা খুব দরকার।

আর এই কাজে স্ট্যাটিন নামক ওষুধটি বেশ পরিচিত।

কিন্তু আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটিন নিয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, এটি নাকি শরীরের জন্য ক্ষতিকর, এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

আবার অনেকে এমনও বলছেন যে, কোলেস্টেরল সম্পর্কিত বিজ্ঞানটাই নাকি ভুল, আর স্ট্যাটিন বিক্রি করার জন্যই এই সব কথা।

এমন পরিস্থিতিতে, স্ট্যাটিন নিয়ে সঠিক তথ্য জানাটা খুব জরুরি।

আসলে, ডাক্তারদের চেম্বারে স্ট্যাটিন একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়।

এটি উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

সারা বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি মানুষ এই ওষুধ ব্যবহার করেন।

এটি হৃদরোগ, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মৃত্যু, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

স্ট্যাটিন মূলত লিভারে কাজ করে।

এটি লিভারে একটি এনজাইমকে (উৎসেচক) বাধা দেয়, যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) তৈরি করতে সাহায্য করে।

LDL রক্তনালীতে জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে কিটো বা কার্নিভোর ডায়েটের (ketogenic and carnivore diet) কথা বলেন, যা উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়।

এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

তাই, এই ধরনের ডায়েট অনুসরণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্ট্যাটিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, যেমন মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা এবং হজমের সমস্যা।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ট্যাটিনের উপকারিতা এর সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে অনেক বেশি।

চিকিৎসকরা মনে করেন, স্ট্যাটিন ব্যবহারের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো যায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব।

তবে, সবার জন্য একই চিকিৎসা কার্যকর নাও হতে পারে।

কিছু মানুষের মধ্যে স্ট্যাটিনের কারণে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে, যাকে স্ট্যাটিন ইনটলারেন্স (statin intolerance) বলা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ডাঃ স্পেন্সার নাডলস্কি (Dr. Spencer Nadolsky) বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার কথা শুনলে মনে হবে স্ট্যাটিন নেওয়া উচিত না।

কিন্তু এটা সময়ের অন্যতম সেরা ওষুধ।”

ডাঃ টম ডে’সপ্রিং (Dr. Tom Dayspring) জানান, “যাদের হৃদরোগের কোনো উপসর্গ নেই, তাদের মধ্যেও এই রোগের ঝুঁকি থাকতে পারে।”

সবশেষে, মনে রাখতে হবে, স্ট্যাটিন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

ইন্টারনেট বা অন্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্ব-চিকিৎসা করা উচিত না।

তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *