ঐতিহ্য আর কারিগরি: কেমন করে একটি পুরনো কোম্পানি আমেরিকার উৎপাদন ব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান, যা আজও সাফল্যের সঙ্গে টিকে আছে, কিভাবে আধুনিক যুগেও উৎপাদন শিল্পে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে? নিউইয়র্কের কুইন্স-এ অবস্থিত ১৫০ বছরের পুরনো পিয়ানো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান স্টেইনওয়ে অ্যান্ড সনস-এর দিকে তাকালে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ খরচ, কঠোর নিয়মকানুন এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাবে ধুঁকছে, সেখানে স্টেইনওয়ে তাদের ব্যতিক্রমী কৌশল এবং গুণগত মানের ওপর জোর দিয়ে নিজেদের সাফল্যের শিখরে নিয়ে গেছে।

স্টেইনওয়ের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো তাদের পণ্যের গুণগত মান। তারা বিশাল পরিমাণে পিয়ানো তৈরি করে না, বরং সীমিত সংখ্যক দক্ষ কারিগর ব্যবহার করে তৈরি করে বিশ্বমানের বাদ্যযন্ত্র।

প্রতিটি পিয়ানো তৈরি করতে প্রায় ১১ মাস সময় লাগে। একটি গ্র্যান্ড পিয়ানোর দাম শুরু হয় প্রায় ৯০,০০০ মার্কিন ডলার থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক কোটির বেশি টাকা।

এই উচ্চমূল্য স্টেইনওয়েকে তাদের উৎপাদনে টিকে থাকতে সাহায্য করে।

তবে, স্টেইনওয়ের পথ সবসময় মসৃণ ছিল না। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা বাদ্যযন্ত্র তৈরির পরিবর্তে বিমানের যন্ত্রাংশ তৈরি করতে বাধ্য হয়েছিল।

কিন্তু তারা তাদের কারিগরদের ধরে রেখেছিল, যারা পরবর্তী প্রজন্মের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। স্টেইনওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেন স্টেইনার সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “গুণগত মান এবং উদ্ভাবনের ওপর জোর না দিলে টিকে থাকা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, শিল্পখাতে কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। যদিও এর ফলে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই হয়।

আগস্ট মাসে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ১২,০০০ কর্মী তাদের চাকরি হারান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের নীতি ব্যবসার জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে।

অন্যদিকে, স্টেইনওয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা। তাদের পিয়ানোর জন্য দরকারি ‘সিতকা স্প্রুস’ কাঠ আলাস্কার একটি বিশেষ অঞ্চল থেকে আসে, যেখানে গাছগুলো খুব ধীরে বাড়ে।

স্টেইনওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা চান, দক্ষ কর্মীর অভাব যেন তাদের উৎপাদন ব্যাহত করতে না পারে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা দেখি, তাহলে এখানেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাটা জরুরি।

আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে গুণগত মান বজায় রেখে বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে হলে, স্টেইনওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে।

গুণগত মান এবং কারুশিল্পের ওপর জোর দিয়ে, সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে কীভাবে একটি সফল ব্যবসা গড়ে তোলা যায়, স্টেইনওয়ে অ্যান্ড সনস-এর গল্পটি তারই প্রমাণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *