বদমেজাজি স্যাকরের বিবিসি ত্যাগের কারণ! কঠিন সিদ্ধান্ত?

বিখ্যাত সাংবাদিক স্টিফেন স্যাকারের বিবিসি ত্যাগের কারণ, ‘হার্ডটক’-এর সমাপ্তি।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র (British Broadcasting Corporation – BBC) জনপ্রিয় টক শো ‘হার্ডটক’-এর ইতি ঘটেছে। আর এর সঙ্গেই বিবিসি ছাড়তে হচ্ছে অনুষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের উপস্থাপক স্টিফেন স্যাকারকে। প্রায় দুই দশক ধরে বিশ্বজুড়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরিচিতি পাওয়া স্যাকারের এই বিদায় অত্যন্ত বেদনার।

১৯৮৬ সালে বিবিসি’তে কর্মজীবন শুরু করা ৬১ বছর বয়সী স্যাকারের যাত্রাটা ছিল সুদীর্ঘ। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর ইউরোপ, ওয়াশিংটন ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে সাংবাদিকতা করেছেন তিনি।

গত ১৯ বছর ধরে ‘হার্ডটক’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান তিনি। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সাহসী ভঙ্গি এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন।

বিবিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে স্যাকার বলেন, তিনি এখনো অনেক কিছু দিতে পারতেন। বিবিসি’র এই সিদ্ধান্তকে তিনি ‘অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

স্যাকার মনে করেন, ‘হার্ডটক’-এর মতো অনুষ্ঠানগুলো এখনকার সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যখন মিথ্যা তথ্য এবং মিডিয়া ম্যানিপুলেশন বাড়ছে, তখন এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনে। ‘হার্ডটক’-এর মাধ্যমে হুগো শ্যাভেজ, সের্গেই লাভরভ, লুলা দা সিলভা, ইমরান খান, সহ আরও অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে বিবিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তার তেমন কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান স্যাকার। বিবিসি’র প্রধান নির্বাহী টিম ডেভি’র সঙ্গে তার একবার কথা হয়েছিল।

ডেভি ‘হার্ডটক’-এর গুরুত্বের কথা স্বীকার করলেও, পরবর্তীতে আর কোনো যোগাযোগ করেননি।

অনুষ্ঠানটি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পর বিবিসির সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টার্নেসের সঙ্গে স্যাকারের একটি বৈঠক হয়। কিন্তু সেই বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।

স্যাকারের মতে, ডেবোরা টার্নেস সম্ভবত তাকে আগে কখনো দেখেননি, তাই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।

স্যাকার মনে করেন, বিবিসি’র শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের অনেকেই ‘হার্ডটক’-এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নন। সম্ভবত তাদের সাংবাদিকতার জগৎ সম্পর্কে সেভাবে ধারণা নেই। তিনি আরও বলেন, বিবিসি’র উচিত ছিল তার মতো অভিজ্ঞ সাংবাদিকের পরামর্শ নেওয়া।

বিবিসি’র এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে স্যাকার বলেন, তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ে সংবাদ পরিবেশনের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। লাইভ নিউজের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে গভীর অনুসন্ধানী কাজ কমে যাচ্ছে।

তবে, স্যাকারের বিবিসি ত্যাগের বিষয়টি এত সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। তিনি মনে করেন, বিবিসি’র প্রতি তার ভালোবাসা এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মান রয়েছে। তাই তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চান না।

বিদায়ের আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, সম্প্রতি তিনি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। লাগার্দে ‘হার্ডটক’ বন্ধ করার কারণ জানতে চান এবং এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

ভবিষ্যতে তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি একটি বই লেখার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে তিনি সাহসী সাংবাদিকদের নিয়ে লিখবেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *