“স্লেরিওফোনিক” : কিভাবে লেড জেপেলিনের গান ব্রডওয়ের মঞ্চে আলোড়ন তুলেছিল।
নিউ ইয়র্কের ব্রডওয়ে থিয়েটারে বর্তমানে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে “স্লেরিওফোনিক” নামের একটি নাটক। এই নাটকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে এক দারুণ গল্প।
গল্পটি শুনলে মনে হয়, যেন কোনো রূপকথার জন্ম হয়েছে। নাটকের লেখক ডেভিড আজমি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, কীভাবে বিখ্যাত রক ব্যান্ড লেড জেপেলিনের একটি গান তার জীবনে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল এবং পরবর্তীতে এই নাটকটি তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
আজমি জানান, ২০১৩ সালে তিনি নাটক লেখা ছেড়ে দিতে চাচ্ছিলেন। আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি শিল্পী হিসেবেও তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।
এমন অবস্থায় তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে সিনেমা ও টেলিভিশনের জন্য চিত্রনাট্য লেখার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এরই মধ্যে মেলন ফাউন্ডেশন থেকে তিনি একটি অনুদান পান, যার শর্ত ছিল তাকে নতুন একটি নাটক লিখতে হবে।
বিমান ভ্রমণে একবার তিনি লেড জেপেলিনের “বেবি আই’ম গনা লিভ ইউ” গানটি শোনেন। গানটি শুনে তিনি এতটাই প্রভাবিত হন যে, একটি নাটক লেখার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি কল্পনা করতে শুরু করেন, ১৯৭০-এর দশকে একটি স্টুডিওতে একটি ব্যান্ড কীভাবে তাদের গান তৈরি করছে। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম হয় “স্লেরিওফোনিক”-এর।
আজমি জানান, প্রথমে তিনি এই নাটকের জন্য পরিচালক হিসেবে ড্যানিয়েল আউকিনকে বেছে নেন। এরপর সঙ্গীত পরিচালক জাস্টিন ক্রেইগ এবং সাউন্ড ডিজাইনার রায়ান রুমিকে যুক্ত করেন।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডেভিড জিনের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছিলেন, যিনি এই নাটকের সেট ডিজাইন করেন। এমনকি জনপ্রিয় ব্যান্ড “আর্কেড ফায়ার”-এর উইল বাটলার এই নাটকের সঙ্গীতের দায়িত্ব নেন।
নাটকটি তৈরির প্রক্রিয়া সহজ ছিল না। গানের রেকর্ড তৈরির খুঁটিনাটি সম্পর্কে আজমির তেমন কোনো ধারণা ছিল না।
তাই তিনি বিভিন্ন তথ্যচিত্র দেখে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কাজটি শুরু করেন। শুরুতে তিনি কয়েকজন অভিনেতা বন্ধুকে নিয়ে একটি ছোট কর্মশালা করেন, যেখানে তারা খেলনা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গানের রিহার্সাল করতেন।
নাটকের গল্পে একটি কাল্পনিক ব্যান্ডের পাঁচজন সদস্যের কথা বলা হয়েছে: ড্রামার সাইমন, লিড গিটারিস্ট পিটার, গায়িকা ডায়ানা, কি-বোর্ডিস্ট হলি এবং বেসবাদক রেগ।
ব্যান্ডের সদস্যরা তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম তৈরির সময় ব্যক্তিগত ও পেশাগত নানা সমস্যায় পড়েন।
নাটকটি তৈরির সময় অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে। সঙ্গীতের সুর তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি দৃশ্যের নির্মাণ পর্যন্ত, সবকিছুতেই ছিল গভীর মনোযোগ।
উইল বাটলার গানের সুর তৈরি করার সময় চরিত্রগুলোর আবেগ এবং তাদের ভেতরের গল্প ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। অবশেষে, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে ব্রডওয়ের মঞ্চে আসে “স্লেরিওফোনিক”।
ডেভিড আজমি বলেন, এই নাটকের নির্মাণ প্রক্রিয়া ছিল এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তিনি এমন কিছু প্রতিভাবান মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, যারা তাদের দক্ষতার মাধ্যমে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।
“স্লেরিওফোনিক” শুধু একটি নাটক নয়, এটি শিল্পীদের পারস্পরিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান