আমেরিকান ফুটবল তারকা স্টিভ ম্যাকমাইকেল: এএলএস-এর সঙ্গে লড়াই শেষে প্রয়াত
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়া জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় এবং পেশাদার কুস্তিগীর স্টিভ ম্যাকমাইকেল, ৬৭ বছর বয়সে জীবনাবসান ঘটিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এএলএস (Amyotrophic Lateral Sclerosis) বা ‘লু গেহরিগ’স ডিজিজ’ নামক এক দুরারোগ্য স্নায়ু-সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। এই খবরটি ক্রীড়া জগৎ এবং তাঁর অগণিত ভক্তদের জন্য গভীর শোকের কারণ হয়েছে।
স্টিফেন “স্টিভ” ম্যাকমাইকেল ছিলেন এক অসাধারণ ক্রীড়াবিদ, যিনি তাঁর শক্তিশালী শরীর এবং মাঠের খেলায় আগ্রাসী মনোভাবের জন্য পরিচিত ছিলেন। শিকাগো বিয়ার্স দলের হয়ে ডিফেন্সিভ ট্যাকল হিসেবে খেলে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে বিয়ার্সের সুপার বোল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
খেলার মাঠে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিস্বরূপ, ২০২৪ সালে তাঁকে প্রো ফুটবল হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা তাঁর ক্রীড়া জীবনের এক বিশাল স্বীকৃতি।
ফুটবল খেলার পাশাপাশি, ম্যাকমাইকেল পেশাদার কুস্তি জগতেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ‘মঙ্গো’ এবং ‘মিং দ্য মার্সিলেস’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং ডাব্লিউসিডব্লিউ (WCW)-এর হয়ে কুস্তি লড়েছেন। কুস্তি জগতে তাঁর আগমন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
২০২১ সালে ম্যাকমাইকেল নিজেই তাঁর এএলএস রোগের কথা প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তিনি ধীরে ধীরে জনজীবন থেকে দূরে সরে যান, কিন্তু তাঁর ভক্তদের মনে তিনি চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। এই রোগ স্নায়ু কোষের উপর প্রভাব ফেলে এবং ধীরে ধীরে শরীরের মাংসপেশীর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
তাঁর এই কঠিন সময়ে, পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধব সবসময় তাঁর পাশে ছিলেন।
ম্যাকমাইকেলের স্ত্রী মিস্তি ম্যাকমাইকেল জানিয়েছেন, স্টিভ ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ এবং তিনি তাঁর হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য খুব অপেক্ষা করছিলেন।
স্টিভ ম্যাকমাইকেলের জন্ম টেক্সাসের হিউস্টনে। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুটবল খেলেছেন। ১৯৮০ সালে নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টস তাঁকে দলে নিলেও, দ্রুতই তিনি সেখান থেকে মুক্তি পান।
এরপর ১৯৮১ সালে তিনি শিকাগো বিয়ার্সে যোগ দেন এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত হন। মাঠের খেলায় তাঁর অসাধারণ দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি দ্রুতই সকলের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠেন।
শিকাগো বিয়ার্সের চেয়ারম্যান জর্জ ম্যাককাস্কি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বিয়ার্সের এই লৌহমানব একটি নিষ্ঠুর রোগের কাছে হার মেনেছেন। স্টিভ তাঁর লড়াইয়ের মাধ্যমে আমাদের দেখিয়েছেন, তাঁর আসল শক্তি ছিল ভেতরের, এবং তিনি প্রতিদিন তাঁর সম্মান, মর্যাদা এবং মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এখন শান্তিতে আছেন।
প্রো ফুটবল হল অফ ফেমের প্রেসিডেন্ট এবং সিইও জিম পোর্টার বলেছেন, “স্টিভ ম্যাকমাইকেল সবাইকে বলেছিলেন যে তিনি ন্যাশনাল ফুটবল লিগে ১৫টি সিজন খেলে যে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, সেই একই দৃঢ়তা নিয়ে তিনি এএলএসের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। এবং তিনি ঠিক সেটাই করেছেন।”
স্টিফ ম্যাকমাইকেলের প্রয়াণে ক্রীড়া জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁর স্মৃতি চিরকাল ক্রীড়াপ্রেমীদের হৃদয়ে অম্লান থাকবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস