শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: বিনিয়োগের সঠিক সময় কি?
শেয়ার বাজারের ওঠা-নামা প্রায়ই উদ্বেগের কারণ হয়, বিশেষ করে যখন অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ে। সম্প্রতি, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বাজারের অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, প্রশ্ন জাগে – এই সময়ে কি বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে? নাকি আরও কিছু দিন অপেক্ষা করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই অস্থিরতা সত্ত্বেও, দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করা একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে। এর কারণ হলো, সময়ের সাথে সাথে মূল্যস্ফীতি আমাদের সঞ্চয়ের value কমিয়ে দেয়। ব্যাংকে টাকা জমা রাখলে হয়তো কিছু সুদ পাওয়া যায়, কিন্তু সেই সুদের হার অনেক সময় মূল্যস্ফীতিকে হারাতে পারে না। ফলে, সময়ের সাথে সাথে আপনার সঞ্চয়ের প্রকৃত মূল্য কমে যায়। অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে, দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে, অনেকেই মনে করেন, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা বেশ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বিনিয়োগের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব, অথবা বাজারের জটিলতা অনেককে এই পথে হাঁটতে বাধা দেয়। অনেকে মনে করেন, শেয়ার বাজার একটি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা, যেখানে বিনিয়োগ করলে লোকসানের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকি বিবেচনা করেই বিনিয়োগ করা উচিত। স্বল্পমেয়াদে বাজারের ওঠা-নামা দেখা গেলেও, দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের একটি গবেষণা বলছে, সেখানকার অনেক মানুষ এখনো সঞ্চয়ের জন্য ব্যাংক অথবা অন্যান্য traditional পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। তারা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করেন। এর প্রধান কারণ হলো, বিনিয়োগের ধারণা তাদের কাছে জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। বাংলাদেশেও একই চিত্র দেখা যায়। এখানেও মানুষজন সাধারণত জমি, সোনা বা ফিক্সড ডিপোজিটের মতো traditional বিনিয়োগের দিকে বেশি ঝোঁক দেখান।
তাহলে, বিনিয়োগ শুরু করার সঠিক উপায় কী? প্রথমত, সেই টাকা বিনিয়োগ করুন, যা আপনার খুব জরুরি নয়। শেয়ার বাজার হলো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জায়গা। তাই, দ্রুত টাকার প্রয়োজন হলে, এই বাজারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, ব্যক্তিগতভাবে শেয়ার বাছাই করার পরিবর্তে, মিউচুয়াল ফান্ড বা ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এতে আপনার ঝুঁকি কমবে এবং বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে আপনার বিনিয়োগ ছড়িয়ে যাবে।
বিনিয়োগ শুরু করার আরেকটি ভালো উপায় হলো নিয়মিত বিনিয়োগ করা। বাজারের ওঠা-নামা দেখে ভয় না পেয়ে, প্রতি মাসে বা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর অল্প অল্প করে বিনিয়োগ করতে পারেন। যখন বাজার নিচে থাকে, তখন আপনি বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন এবং বাজার ভালো হলে, আপনার বিনিয়োগের মূল্য বাড়বে।
মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। তাড়াহুড়ো না করে, ধীরে ধীরে এবং বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। যদি আপনি বিনিয়োগের বিষয়ে নিশ্চিত না হন, তবে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে পারেন।
পরিশেষে, অস্থির বাজারে বিনিয়োগ করা কঠিন মনে হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনার আর্থিক সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই, ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে, ধীরে ধীরে বিনিয়োগ শুরু করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian