আতঙ্কে বাজার! ট্রাম্পের শুল্কে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা!

বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় টালমাটাল শেয়ার বাজার, উদ্বেগে বিনিয়োগকারীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে।

এর প্রভাব পড়েছে এশিয়া থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া বিশাল শুল্ক নীতির কারণে বুধবার এশিয়ার শেয়ার বাজারগুলোতে বড় দরপতন দেখা গেছে। এর মধ্যে জাপানের নিক্কেই সূচক ৪ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ১.৫ শতাংশ কমেছে।

এর আগে সোমবার হ্যাং সেং সূচক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, যা ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের পর থেকে একদিনের সবচেয়ে বড় পতন।

দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার বাজারও তীব্র ক্ষতির শিকার হয়েছে। দেশটির প্রধান সূচক কোস্পি বুধবার প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ স্তর থেকে উল্লেখযোগ্য পতন।

এর কারণ হিসেবে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির প্রভাব কমাতে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অটোমোবাইল শিল্পের জন্য ১.৩ বিলিয়ন ডলারের জরুরি সহায়তা ঘোষণা করেছে।

তাইওয়ানের বাজারও বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে চীনের সাংহাই শেয়ার বাজারে সামান্য উত্থান দেখা গেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে। মঙ্গলবার শেয়ার বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে দেখা গেলেও, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চীন তাদের ওপর আরোপিত ৩৪ শতাংশ শুল্ক কমাতে নির্দিষ্ট সময়সীমা অনুসরণ করেনি।

ফলে বুধবার সকালে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রায় দ্বিগুণ করে দেয়। এর ফলে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা চীনা পণ্যের ওপর সর্বনিম্ন ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

এছাড়া, অনেক দেশ, যাদের ওপর সরাসরি এই শুল্ক আরোপ করা হয়নি, তাদেরও ১০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে।

এই ঘোষণার পর শেয়ার বাজারে দ্রুত দরপতন শুরু হয়। বুধবার সকালে ডাউ ফিউচার ৭৫০ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমে যায়।

এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার ২.২ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচার ২.৫ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ‘বেয়ার মার্কেট’-এ প্রবেশ করতে পারে, যা বাজারের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে সোনার দাম বেড়েছে এবং তা প্রায় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

অন্যদিকে, তেলের দাম কমে ব্যারেল প্রতি ৫৭ ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারীর পর সর্বনিম্ন।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে ভ্রমণের চাহিদা কমবে, ফলে তেলের চাহিদাও হ্রাস পাবে।

এই পরিস্থিতিতে, মার্কিন বন্ডের ফলনও বেড়েছে, যা সাধারণত সংকটকালে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা যায় না।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটালের কারণে আমদানি-রপ্তানি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *