শেয়ার বাজারের দৌড় কি তবে সবে শুরু?

শেয়ার বাজারের উত্থান: ভবিষ্যতেও কি এই ধারা বজায় থাকবে?

যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে সম্প্রতি দারুণ তেজিভাব দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই বছরটিতে বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি অনেক হিসাবকে ভুল প্রমাণ করেছে।

একদিকে যেমন দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা, তেমনই এই পরিস্থিতির মধ্যেও শেয়ার বাজার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই উত্থান হয়তো সবে শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমালে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই কারণে বিনিয়োগকারীরা আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এছাড়াও, বিভিন্ন কোম্পানির ভালো মুনাফা এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই (AI) প্রযুক্তির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাজারের জন্য ভালো লক্ষণ। যদিও বাজারের এই উচ্চমূল্য নিয়ে কারো কারো মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, তবে বিশ্লেষকদের মতে, আপাতত শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

ইতিমধ্যেই, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক (S&P 500) ছয় মাসের কিছু বেশি সময়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। বাজারের এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ হলো কোম্পানিগুলোর ভালো আয় করা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে বাজারে টিকে থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে “ফোমো” (FOMO – Fear of Missing Out) কাজ করছে। অর্থাৎ, বাজারের এই উত্থানে অংশগ্রহণে ব্যর্থ হওয়ার একটা ভয় তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

তবে, সবকিছু যে ভালো, তেমনটা নয়। কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্রমবাজারে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে।

যদিও এখন পর্যন্ত ভোক্তাদের ব্যয় করার প্রবণতা ভালো আছে, তবে কর্মসংস্থান কমতে থাকলে এর প্রভাব কোম্পানির মুনাফার উপর পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শেয়ার বাজারের এই উত্থানে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেটা, মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যাপল, অ্যামাজন, এনভিডিয়া এবং টেসলার মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এই বছর এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচকের বৃদ্ধিতে প্রায় ৪১ শতাংশ অবদান রেখেছে। এই কোম্পানিগুলোর আয়ের উপর এখন সবার নজর।

অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনের বিরল খনিজ রপ্তানির উপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ এবং এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে শেয়ার বাজারকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।

সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি একদিকে যেমন ইতিবাচক, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগের কারণও রয়েছে। ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত, কোম্পানিগুলোর ভালো আয় এবং এআই প্রযুক্তির প্রসার—এগুলো বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক।

তবে, বাণিজ্য যুদ্ধ, শ্রমবাজারের দুর্বলতা, এবং বাজারের উচ্চ মূল্য—এগুলো কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিনিয়োগকারীদের বাজারের গতিবিধির উপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *