শেয়ার বাজারে ধস! ট্রাম্পের শুল্কের ঘোষণায় মন্দার আশঙ্কা?

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়, সেই সঙ্গে ডলারের মানও কমে যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডাউ জোন্স ফিউচার ১,২০০ পয়েন্ট বা ২.৮৭ শতাংশ কমে যায়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ৩.৫ শতাংশ এবং প্রযুক্তি খাতের নাসডাক ৪.২ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দেয়। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের ওপর ট্রাম্পের বিশাল শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা শুরু হতে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ডলারের দুর্বল হয়ে যাওয়ার পেছনেও এই কারণটি অন্যতম। সাধারণত শুল্ক বাড়লে ডলারের দাম বাড়ে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে, যার ফলস্বরূপ অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর পতন হয়েছে।

একই কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ঝুঁকছেন। বুধবার সোনার দাম নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে প্রতি আউন্স ৩,১৬০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বন্ডের ফলনও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প যদি এই বিশাল শুল্ক বহাল রাখেন, তাহলে ২০২৫ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিতে পারে।

জেপি মর্গান-এর বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্কের কারণে আমেরিকানদের ওপর বছরে ৬৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি করের বোঝা চাপবে। যা সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় কর বৃদ্ধি। এর ফলে পণ্যের দামও বাড়বে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিকে আরও ২ শতাংশ বাড়াতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। এছাড়া, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য দেশগুলো যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর সংগঠন ‘বিজনেস রাউন্ডটেবিল’ সতর্ক করে বলেছে, ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক তাদের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের মতে, ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন প্রস্তুতকারক, শ্রমিক, পরিবার এবং রপ্তানিকারকদের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ফিস রেটিং অনুসারে, ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্ক পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের হার গত বছরের ২.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। যা ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি শুল্ক আইনের পর সর্বোচ্চ।

ফিস রেটিং-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ ওলু সোনোলা বলেন, এই শুল্ক হার বহাল থাকলে অনেক দেশ সম্ভবত মন্দার দিকে যাবে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের উচিত হবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *