শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: কিভাবে বিনিয়োগ করবেন?
সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে প্রায়ই উত্থান-পতন দেখা যাচ্ছে। কোনো দিন সূচক বাড়ছে তো, আবার কোনো দিন কমছে। এমন অস্থির পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দুশ্চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক।
বাজারের এই ওঠা-নামা দেখে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নাও হতে পারে। বরং, এতে ক্ষতির সম্ভবনা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের এই ধরনের অস্থিরতা নতুন কিছু নয়। বরং, এটি দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্নের পথে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এলপিএল ফাইনান্সিয়াল-এর প্রধান কৌশলবিদ জেফ বুখবাইন্ডার যেমনটা বলেছেন, “অস্থিরতা হলো আকর্ষণীয় দীর্ঘমেয়াদী রিটার্নের পথে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া একটি ‘টোল’।
তাহলে, এমন পরিস্থিতিতে একজন বিনিয়োগকারীর করণীয় কী?
প্রথমেই, আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করা উচিত নয়। বাজারের অস্থিরতা স্বল্পমেয়াদী বিষয়।
মাঝে মাঝে, শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে – একে ‘সংশোধন’ (correction) বলা হয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, দীর্ঘ সময়ে মার্কিন শেয়ার বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা ধৈর্য ধরে বিনিয়োগকারীদের ভালো ফল দিয়েছে। এই একই ধারণা বাংলাদেশের বাজারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তবে, বাজারের এই অস্থিরতা আমাদের মনে রাখতে হবে, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যখন বাজারের পরিস্থিতি ভালো থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরা লাভবান হন।
আবার, খারাপ পরিস্থিতিতে ক্ষতির সম্ভবনা থাকে। তাই, স্বল্পমেয়াদী লাভ-ক্ষতির হিসাব না করে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।
শেয়ার বাজারের অস্থিরতা মূলত বাজারের কিছু স্বাভাবিক নিয়মের কারণে হয়ে থাকে। যেমন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অথবা কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে বাজারে দ্রুত প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।
তাহলে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের কৌশল কী হওয়া উচিত?
- ধৈর্য ধরুন এবং শান্ত থাকুন: অস্থির বাজারে আবেগতাড়িত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত না। এতে লোকসানের সম্ভবনা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, বাজারের ওঠা-নামা স্বাভাবিক। তাই, অস্থিরতা সত্ত্বেও আপনার বিনিয়োগের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকুন।
- বৈচিত্র্য আনুন (Diversify): আপনার পোর্টফোলিওকে বিভিন্ন খাতে বিভক্ত করুন। শুধুমাত্র একটি খাতে বিনিয়োগ না করে, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার, বন্ড, এবং অন্যান্য সম্পদ যেমন – ফিক্সড ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। এর ফলে, একটি খাতে ক্ষতি হলেও, অন্য খাত থেকে লাভ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
- দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্য (যেমন – সন্তানের শিক্ষা, বাড়ি তৈরি, অবসর জীবন) নির্ধারণ করুন। সেই অনুযায়ী, একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করুন। বাজারের অস্থিরতা সত্ত্বেও, আপনার লক্ষ্যে অবিচল থাকুন।
- বাজারের খবর রাখুন: নিয়মিতভাবে শেয়ার বাজার এবং দেশের অর্থনীতির খবর রাখুন। এতে বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং সেই অনুযায়ী, বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
- পেশাদার পরামর্শ নিন: বিনিয়োগের বিষয়ে আপনার যদি কোনো দ্বিধা থাকে, তবে একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন। তিনি আপনার আর্থিক অবস্থা ও লক্ষ্যের কথা বিবেচনা করে সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়, তবে সঠিক কৌশল এবং ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। অস্থিরতা সত্ত্বেও, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনার আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন