শেয়ার বাজারের টালমাটাল অবস্থা! বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ কেন?

শেয়ার বাজারে অস্থিরতা: চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের আঁচ বাংলাদেশেও?

গত কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে এখন বেশ অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে মাথাচড়া দেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগ। বিশ্ব অর্থনীতির এই দুই প্রধান শক্তির মধ্যেকার সম্পর্ক আবারও তিক্ত হওয়ায়, প্রযুক্তি ও চিপ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কমে গেছে।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা মঙ্গলবার বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া গেছে। যদিও এক পর্যায়ে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ৬১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, দিন শেষে এটি ২০৩ পয়েন্ট বেড়ে ০.৪৪ শতাংশ লাভ করে। অন্যদিকে, এস&পি ৫০০ সূচক ০.১৬ শতাংশ এবং প্রযুক্তি নির্ভর নাসডাক সূচক ০.৭২ শতাংশ কমেছে।

মূলত, দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের কারণে বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে শুরু হয়েছে। এর ফলে বিশ্ব বাজারের পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে এবং অর্থনৈতিক মন্দা আসারও সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন সম্প্রতি বিরল খনিজ পদার্থের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এর ফলস্বরূপ, চীনের পক্ষ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি শিপিং কোম্পানির পাঁচটি মার্কিন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, চীন তাদের সামুদ্রিক খাতে মার্কিন বাণিজ্য তদন্তের বিষয়েও পর্যালোচনা করছে।

এই পরিস্থিতিতে, বিনিয়োগকারীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিভিন্ন খাতে। বিশেষ করে, প্রযুক্তি এবং চিপ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ক্ষতির শিকার হতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন উৎপাদনকারীরাও চীনের চাহিদা হ্রাসের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে। এর ফলে, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়াও, পোশাক শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে, যা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াতে পারে।

তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। বর্তমানে, উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং অদূর ভবিষ্যতে একটি সমঝোতা হতে পারে বলেও তারা আশা করছেন।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিনিয়োগের আগে বাজারের পরিস্থিতি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *