চাপ: কিভাবে জীবনকে আরও উন্নত করে তুলবেন? ৫টি কার্যকরী উপায়!

মানসিক চাপ: ভালো এবং খারাপের মধ্যেকার বিভেদ এবং এর সমাধানে করণীয়।

“মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” – এই কথাটি আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। নিঃসন্দেহে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে, যা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতার কারণ হতে পারে।

তবে, সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, সব ধরনের মানসিক চাপ খারাপ নয়। কিছু ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট মাত্রার মানসিক চাপ আমাদের বৃদ্ধি এবং ভালো থাকার জন্য জরুরি।

ডাক্তার শ্যারন বার্কুইস্ট, যিনি “দ্য স্ট্রেস প্যারাডক্স: হোয়াই ইউ নিড স্ট্রেস টু লাইভ লঙ্গার, হেলদিয়ার, অ্যান্ড হ্যাপিয়ার” বইটির লেখক, সিএনএন-এর প্রধান চিকিৎসা বিষয়ক সংবাদদাতা ড. সঞ্জয় গুপ্তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের ক্ষতি করে, তবে পর্যাপ্ত মানসিক চাপ না পাওয়াটাও সমান ক্ষতিকর।”

বার্কুইস্টের মতে, মানসিক চাপের ধরন এর ভালো-মন্দ প্রভাবের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ভালো মানসিক চাপকে সেই ধরনের চাপ হিসেবে বর্ণনা করেন যা আমাদের মধ্যে ভালো কিছু হরমোন তৈরি করে।

উদাহরণস্বরূপ, ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডোপামিন, কোনো কিছু অর্জনের আনন্দ থেকে সেরোটোনিন এবং অন্যের উপকারে আসার অনুভূতি থেকে অক্সিটোসিন নির্গত হয়। এই হরমোনগুলো আমাদের শরীরের জন্য উপকারী।

অন্যদিকে, খারাপ মানসিক চাপ হলো অপ্রত্যাশিত, যা সহজে এড়ানো যায় না এবং যা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে। এই ধরনের মানসিক চাপের কারণে শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন নির্গত হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

অতিরিক্ত কর্টিসল-এর প্রভাবে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বার্কুইস্টের মতে, মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা বাড়ে, যখন আমরা ভালো মানসিক চাপের সম্মুখীন হই। ভালো মানসিক চাপ আমাদের “রেসিলিয়েন্স” বা মানসিক স্থিতিশীলতা তৈরি করে, যা একটি পেশীর মতো।

একে শক্তিশালী করতে হলে, নিয়মিতভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া প্রয়োজন।

তাহলে, জীবনে ভালো মানসিক চাপ যোগ করার উপায় কী? বার্কুইস্ট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন:

  • নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের সীমা ভেঙে নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন, তবে হতাশ হবেন না।
  • আপনার বিশ্বাস ও মূলবোধের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কাজ করুন।
  • অর্থপূর্ণ এবং উদ্দেশ্য-নির্ভর চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করুন।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পুনরুদ্ধারের জন্য সময় দিন।
  • শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করুন। যেমন, ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা, অথবা স্বল্প সময়ের জন্য ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে থাকা।

বার্কুইস্ট আরও বলেন, “মানসিক চাপ আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের মানব ইতিহাস হলো মানসিক চাপকে জয় করার ইতিহাস, এবং এর মাধ্যমেই আমরা শক্তিশালী হয়েছি।”

সুতরাং, মানসিক চাপকে ভয় না পেয়ে, এটিকে জীবনের একটি অংশ হিসেবে গ্রহণ করে, সঠিক উপায়ে এর মোকাবিলা করতে পারলে, আমরা আরও সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে পারি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *