মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধে গুরুতর বকেয়া বেড়েছে, এমনটাই উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে। তথ্যানুসারে, কোভিড-১৯ অতিমারীর সময় শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে স্থগিতাদেশ ছিল, তা তুলে নেওয়ার পরেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঋণগ্রহীতা, যারা তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।
ট্রান্সইউনিয়ন নামক একটি গবেষণা ও বিশ্লেষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ছাত্র ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশে।
এই হারটি একটি রেকর্ড। এর আগে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ১৫.৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ঋণগ্রহীতা সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি। এই বকেয়া পরিশোধের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৯০ দিন বা তার বেশি সময় ধরে কিস্তি পরিশোধ না করলে তাকে গুরুতর বকেয়া হিসেবে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রায় ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী ঋণগ্রহীতা বর্তমানে তাদের কিস্তি পরিশোধে পিছিয়ে আছেন।
এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, হয় তারা কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা সম্পর্কে অবগত নন, অথবা তাদের আর্থিক অবস্থা এমন যে তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না।
এছাড়াও অনেকে আছেন যারা হয়তো ঋণ পরিশোধ করতে আগ্রহী নন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বকেয়া ঋণের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট স্কোর বা ঋণ পরিশোধের ইতিহাসে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
এর ফলে ভবিষ্যতে তাদের জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি, ঋণ পেলেও সুদের হার বেশি হতে পারে।
নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের গবেষণা অনুযায়ী, সময় মতো কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে দুর্বল ক্রেডিট স্কোর সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের স্কোর গড়ে ৮৭ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে গেছে। যাদের স্কোর ভালো, তাদের ক্ষেত্রেও স্কোর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
ট্রান্সইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিশেল র্যানের মতে, অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের অনেকেই হয়তো জানেন না কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে ঋণের কিস্তি পরিশোধের উপর যে স্থগিতাদেশ ছিল, তা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।
তবে ঋণগ্রহীতারা ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু সুবিধা পাবেন।
এই পরিস্থিতি সেখানকার শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ২৯ বছর বয়সী টাইলার উইকর্ড নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ১২ হাজার ডলারের বেশি ছাত্র ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।
একদিকে যেমন তাকে বাড়ি ভাড়ার চিন্তা করতে হচ্ছে, তেমনি ক্রেডিট কার্ডের ঋণও পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিনি এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের আর্থিক ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তোলে।
তাই সময় থাকতে ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন