আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা! ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা!

যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা ঋণ পরিশোধে খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। আগামী মাস থেকে ডিফল্ট হওয়া শিক্ষা ঋণের অর্থ আদায়ের প্রক্রিয়া জোরদার করা হবে, যার মধ্যে কর্মীদের বেতন থেকে সরাসরি ঋণ পরিশোধের মতো বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির শিক্ষা দপ্তর সূত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বর্তমানে প্রায় ৫৩ লক্ষ আমেরিকান শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের ফলে ঋণগ্রহীতারা নতুন করে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর সময় শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে যে শিথিলতা ছিল, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তার অবসান হতে চলেছে।

জানা গেছে, আগামী ৫ই মে থেকে শিক্ষা দপ্তর ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে। এর ফলে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের ট্যাক্স রিফান্ড, সরকারি বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আটকে দেওয়া হতে পারে।

এছাড়া, এক মাস পর থেকে খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বেতন থেকেও সরাসরি ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।

এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন অধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, বাইডেন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ছাত্র ঋণ নীতিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তনের কারণে ঋণগ্রহীতারা ইতিমধ্যে বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন।

স্টুডেন্ট বোরোয়ার প্রোটেকশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক মাইক পিয়ার্স বলেন, “এটি নিষ্ঠুর, অপ্রয়োজনীয় এবং দেশের কর্মজীবী পরিবারগুলোর জন্য অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলবে।

২০২০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ঋণ পরিশোধের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিলেন, যা কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নেওয়া একটি পদক্ষেপ ছিল।

পরবর্তীতে বাইডেন প্রশাসন বেশ কয়েকবার এই সময়সীমা বাড়িয়েছে, যা ২০২৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

এরপরে, ঋণ পরিশোধের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে শেষ হয়।

এর ফলে, কয়েক কোটি আমেরিকানকে পুনরায় তাদের শিক্ষা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী টানা নয় মাস ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তাকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই তথ্য তাদের ক্রেডিট রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বর্তমানে খেলাপিদের বাইরে আরও প্রায় ৪০ লক্ষ শিক্ষার্থী তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ৯০ থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত বিলম্ব করছেন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ শতাংশেরও কম নিয়মিতভাবে তাদের শিক্ষা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা ঋণের জটিল নিয়মকানুন এবং ঋণ পরিশোধের বিভিন্ন পদ্ধতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।

উদাহরণস্বরূপ, আয়-নির্ভর পরিশোধ পরিকল্পনাগুলিও বর্তমানে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

ফেব্রুয়ারিতে আদালতের একটি রায়ের পর কিছু পরিশোধ পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছিল, যদিও পরে সেগুলোকে আবার চালু করা হয়।

শিক্ষা ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়া থেকে বাঁচতে ঋণগ্রহীতারা ঋণ পুনর্বাসন প্রোগ্রামের সুবিধা নিতে পারেন।

এই প্রোগ্রামের অধীনে, ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণ প্রদানকারীর কাছে আবেদন করে কিস্তির পরিমাণ কমাতে পারেন।

সাধারণত, ঋণ প্রদানকারীরা তাদের আয়ের প্রমাণ এবং ব্যয়ের হিসাব চান।

যদি কোনো ঋণগ্রহীতা টানা নয় মাস সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন, তাহলে তাকে খেলাপি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তবে, এই ঋণ পুনর্বাসন প্রোগ্রামটি একবারের বেশি ব্যবহারের সুযোগ থাকে না।

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষা ঋণ প্রদান পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: বিভিন্ন মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ও সরকারি সূত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *