সুক্রালোজ: চিনি-মুক্তির নামে বাড়ছে বিপদ?

কৃত্রিম মিষ্টি সুক্রালোজ মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং ক্ষুধা বাড়ায়, নতুন গবেষণায় এমনটাই জানা গেছে। যারা ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত চিনিমুক্ত খাবার খান, তাদের জন্য এই খবরটি বেশ উদ্বেগের।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুক্রালোজ নামক একটি কৃত্রিম মিষ্টি উপাদান আসলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে ক্ষুধা বেড়ে যেতে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেক স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক এবং গবেষণা পরিচালক ড. কেটি পেজের নেতৃত্বে এই গবেষণাটি করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সুক্রালোজ মিশ্রিত পানীয় পান করেছেন, তাদের ক্ষুধা সাধারণ চিনির (যেমন: সুক্রোজ) সঙ্গে পানি পানকারীদের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সহজ ভাষায় বললে, সুক্রালোজ মেশানো পানীয় খেলে মস্তিষ্কে এমন একটি সংকেত যায়, যা আরও বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি করে।

গবেষণায় ৭৫ জন মানুষের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের তিনটি আলাদা পানীয় পান করতে দেওয়া হয়: সাধারণ পানি, চিনিযুক্ত পানি এবং সুক্রালোজ মিশ্রিত পানি।

প্রত্যেকবার পানীয় পান করার আগে এবং পরে তাদের রক্তের শর্করার মাত্রা ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরীক্ষা করা হয়। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিমাপের জন্য কার্যকরী ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (fMRI) ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সুক্রালোজ খাওয়ার পর মস্তিষ্কের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী অংশে বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়। এর ফলে, যারা সুক্রালোজ পান করেছেন, তাদের মধ্যে বেশি ক্ষুধা অনুভব হয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফলগুলি আরও কিছু বিষয়কে সামনে এনেছে। যেমন, সুক্রালোজ সেবনে মস্তিষ্কের এমন কিছু অংশে সংযোগ বাড়ে যা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

এছাড়া, শরীরে এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ হয় না, যা খাওয়ার পর আমাদের তৃপ্তির অনুভূতি দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃত্রিম মিষ্টি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এটি মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং শরীরের স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) আগে থেকেই চিনি-মুক্ত মিষ্টি ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছে। তাদের মতে, ওজন কমানোর জন্য চিনি-মুক্ত মিষ্টির ওপর নির্ভর করা দীর্ঘমেয়াদে কোনো কাজে আসে না।

তবে, এই গবেষণায় ব্যবহৃত সুক্রালোজ অন্যান্য অনেক খাবারেও পাওয়া যায়।

যেমন: স্প্লেন্ডা (Splenda)। ইউরোপে এটি E955 নামে পরিচিত এবং ক্যান্ডিস, ক্যান্ডারেল ইয়োলো, কুকরেন, নেভেল্লা, সুক্রা প্লাস, সুকরানা ও জিরোক্যাল-এর মতো ব্র্যান্ডগুলোতে ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবারের তালিকা থেকে অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি বাদ দেওয়া ভালো। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এমন অনেক খাবার রয়েছে, যেখানে আমরা অজান্তেই চিনি গ্রহণ করি।

যেমন: সালাদ ড্রেসিং, পাস্তা সস, রুটি, ক্র্যাকার্স এবং এমনকি কিছু নোনতা চিপস-এও চিনি থাকতে পারে।

তাই, খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করা এবং মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে আনা প্রয়োজন।

আপনার খাদ্য তালিকায় কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার কমাতে চেষ্টা করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *