সুদানের মানবিক সংকট: সেনাবাহিনীর নতুন নিয়মের জেরে ত্রাণকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ
সুদানে চলমান গৃহযুদ্ধ এবং তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী কর্মীদের ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী-সমর্থিত সরকারের নতুন নির্দেশনায় স্থানীয় ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সরকারের মানবাধিকার কমিশন (Humanitarian Aid Commission – HAC)-এর অধীনে নিবন্ধিত হতে বলা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে খাদ্য সংকটে জর্জরিত প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, খার্তুম রাজ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠনগুলোকে HAC-এর অধীনে নিবন্ধন করতে হবে। HAC হলো একটি সরকারি সংস্থা, যা সুদানে মানবিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। এই সংস্থাটির ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এবং তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর ওপর নজরদারি করতে পারবে। এর ফলে ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় ত্রাণকর্মীরা বলছেন, HAC-এর এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তাদের কাজ কঠিন হয়ে পড়বে। জরুরি সাহায্য সংস্থাগুলো (Emergency Response Rooms – ERRs), যারা স্থানীয় পর্যায়ে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করে থাকে, তাদের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ত্রাণকর্মী জানান, “HAC আমাদের নিবন্ধন করতে বাধ্য করছে এবং আমরা যদি নিবন্ধন ছাড়াই কাজ করি, তাহলে স্বেচ্ছাসেবকদের গ্রেপ্তার করারও ভয় রয়েছে।
HAC-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিবন্ধন করতে প্রায় ৮০০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৮,০০০ টাকা) ফি দিতে হবে এবং কর্মীদের নামের তালিকা জমা দিতে হবে। HAC-এর কমিশনার খালেদ আবদেলরাহিম আহমেদ আল জাজিরাকে বলেন, “মানবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
এপ্রিল ২০২৩ থেকে সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF)-এর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। এই পরিস্থিতিতে ERRs-গুলো খাদ্য বিতরণ, সুরক্ষা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে তারা কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু এরই মধ্যে তারা উভয় পক্ষের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, HAC মূলত সেনাবাহিনীর একটি শাখা, যা ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তাদের আশঙ্কা, ERRs-গুলোকে নিবন্ধনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং তাদের সীমিত বাজেট থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। এর ফলে খার্তুমে বসবাসকারী মানুষেরা খাদ্য সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সুদানের একজন বিশেষজ্ঞ, খলুদ খায়ের, আল জাজিরাকে বলেন, “খার্তুমের অনেক এলাকায় মানুষ দিনে একবেলা খাবার খাচ্ছে। যদি ERRs-এর স্বেচ্ছাসেবকরা নিরাপত্তা জনিত কারণে খাবার দিতে না পারে, তাহলে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
এছাড়াও, স্থানীয় ত্রাণকর্মীদের আশঙ্কা, HAC-এর কাছে নাম তালিকাভুক্ত করার পর তাদের সদস্যদের হয়রানি করা হতে পারে অথবা গ্রেপ্তার করা হতে পারে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ‘করমা’ (মর্যাদা) নামে কিছু মানবিক কমিটি তৈরি করা হয়েছে, যারা খার্তুমে কিছু পরিষেবা প্রদান করছে। তবে ত্রাণকর্মীরা মনে করেন, এই কমিটিগুলো সেনাবাহিনীর প্রতি আনুগত্য তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, সেনাবাহিনী খাদ্য ও ত্রাণকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা অঞ্চলগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের মুখপাত্র ড্যানিয়েল তেঙ্গো জানিয়েছেন, HAC-এর সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং ERRs-এর নিবন্ধন নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
সব মিলিয়ে, HAC-এর নতুন নিয়ম সুদানে মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা