সুদানের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ পুনরায় সেনাবাহিনীর দখলে, দুই বছর পর খার্তুমে বড় জয়।
সুদানের সামরিক বাহিনী খার্তুমে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ পুনরুদ্ধার করেছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধের পর এটি ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনীর দখলে থাকা রাজধানী খার্তুমের শেষ ঘাঁটি।
শুক্রবার, ২১শে রমজান তারিখে সেনারা প্রাসাদে প্রবেশ করে এবং তাদের বিজয়ের ঘোষণা দেয়। সৈন্যদের বুটের নিচে ভাঙা টাইলসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে।
সৈন্যদের হাতে ছিল স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও রকেট-চালিত গ্রেনেড লঞ্চার, আর তারা “আল্লাহু আকবার” ধ্বনি দিচ্ছিল।
সুদানের তথ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যম X এ এক পোস্টে জানান, সামরিক বাহিনী প্রাসাদটি পুনরুদ্ধার করেছে।
তিনি লেখেন, “আজ পতাকা উড্ডীন করা হয়েছে, প্রাসাদ ফিরে এসেছে এবং বিজয় সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।” নীল নদের তীরে অবস্থিত এই প্রাসাদটি সুদানের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
যুদ্ধের আগে এটি ছিল সরকারের কেন্দ্র, এমনকি সুদানি মুদ্রার নোট ও ডাকটিকিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও এর ছবি দেখা যায়। এটি সুদানের সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় বিজয়, যা জেনারেল আবদেল-ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অর্জিত হয়েছে।
এই প্রাসাদ পুনরুদ্ধারের ফলে, জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন প্রতিদ্বন্দ্বী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) খার্তুম থেকে বিতাড়িত করা হলো।
যদিও আরএসএফ তাৎক্ষণিকভাবে পরাজয় স্বীকার করেনি, তবে এটি যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবে না, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা এখনো সুদানে বিদ্যমান।
বৃহস্পতিবার রাতে আরএসএফ দাবি করেছে যে তারা উত্তর দারফুরের কৌশলগত মরু শহর আল-মালিহার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
সুদানের সামরিক বাহিনী আল-মালিহার আশেপাশে লড়াইয়ের কথা স্বীকার করলেও শহরটি হারানোর কথা জানায়নি। আল-মালিহা শহরটি এল ফাশের থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
এল ফাশের শহরটি সুদানি সামরিক বাহিনীর হাতে থাকলেও আরএসএফের আক্রমণে এটি প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রধান বলেছেন, এই সংঘাত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট তৈরি করেছে।
যুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৮,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, কয়েক মিলিয়ন মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের কারণে অনেক পরিবারকে ঘাস খেয়ে জীবন ধারণ করতে হচ্ছে। যদিও মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ একসময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কেন্দ্র ছিল।
১৯৫৬ সালে এই প্রাসাদেই প্রথম স্বাধীন সুদানের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। এটি সুদানের রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।
সুদানের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে প্রাসাদ এবং এর আশপাশের এলাকাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়ে আসছিল।
উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ সুদানে ২০১৯ সালে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।
এরপর গণতন্ত্রের দিকে একটি সংক্ষিপ্ত উত্তরণের চেষ্টা হলেও ২০২১ সালে বুরহান ও দাগালোর নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তা ব্যর্থ হয়।
২০২৩ সালে আরএসএফ এবং সুদানের সামরিক বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
বছরের শুরু থেকে বুরহানের বাহিনী আরএসএফের বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে। তারা খার্তুমের উত্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ তেল শোধনাগার পুনরুদ্ধার করেছে এবং রাজধানী সংলগ্ন আরএসএফের অবস্থানগুলোর দিকেও অগ্রসর হচ্ছে।
এই লড়াইয়ে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে।
ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (International Criminal Court – ICC) অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ২০০0-এর দশকের গোড়ার দিকে দারফুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়েছিলেন।
আরএসএফের পূর্বসূরি ছিল জানজাওয়িদ মিলিশিয়া।
মানবাধিকার সংস্থা এবং জাতিসংঘের মতে, আরএসএফ ও তাদের মিত্র আরব মিলিশিয়ারা এই যুদ্ধে আবারও জাতিগত আফ্রিকান গোষ্ঠীগুলোর উপর আক্রমণ চালিয়েছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সুদানের সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ উভয়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আরএসএফকে গণহত্যা চালানোর জন্য অভিযুক্ত করেছে। উভয় পক্ষই তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান