সুদানের রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরায় নিজেদের দখলে নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী এবং প্যারামিলিটারি র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে চলা তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে এটি সেনাবাহিনীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
এপ্রিল ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক মিলিয়ন মানুষ। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আরএসএফ খার্তুমের উপর অবরোধ জারি করে রেখেছিল।
শুক্রবার (আজ) দেশটির সরকার ঘোষণা করেছে যে তাদের সেনারা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং রাজধানী পুনরুদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখবে। তথ্যমন্ত্রী খালিদ আল-আইসার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, “আজ পতাকা উড়ছে, প্রাসাদ ফিরে এসেছে এবং বিজয় সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই যাত্রা চলবে।”
বর্তমানে খার্তুমের কিছু অংশ এখনও আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তারা দেশটির পশ্চিমা, দক্ষিণাঞ্চলীয় এবং কেন্দ্রীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে দারফুরও রয়েছে। এখানে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চল।
জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র সেইফ মাঙ্গো বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, “গত ১২ই মার্চ থেকে খার্তুমের পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর ওমদুরমানে সুদানিজ সশস্ত্র বাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের আর্টিলারি শেলিং ও বিমান হামলায় কয়েক ডজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে স্থানীয় মানবিক সাহায্যকারীও রয়েছেন।”
সংবাদ সংস্থা সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে।
এছাড়া, ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে এক বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। মাঙ্গো আরও বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে যে আরএসএফ এবং তাদের মিত্র বাহিনী খার্তুমের পূর্বাঞ্চলে বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে এবং বেসামরিক লোকজনকে আটক করছে।
এছাড়া, তারা কমিউনিটি রান্নাঘর ও চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী লুট করেছে। সুদানিজ সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের সহযোগী যোদ্ধারাও খার্তুম নর্থ (বাহরি) এবং পূর্ব নীল অঞ্চলে লুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত।”
সুদানের এই পরিস্থিতি সেখানকার সাধারণ মানুষের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন