সুদানে ভয়াবহ আক্রমণ! আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা

যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদানে আবারও হামলা, বাড়ছে মানবিক সংকট।

সুদানের সেনাবাহিনী (SAF) এবং আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (RSF) এর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে দেশটির বিভিন্ন স্থানে হামলা অব্যাহত রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে।

আল জাজিরার খবর অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরে RSF এর হামলায় অন্তত নয়জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজন শিশুও রয়েছে। এছাড়া, আরও সাতজন আহত হয়েছেন।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা শহরে অভিযান চালিয়ে ছয়জন RSF সদস্যকে হত্যা করেছে এবং তিনটি যুদ্ধ যান ধ্বংস করেছে। তবে, সেনাবাহিনীর এই বিবৃতির উপর RSF এর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এল-ফাশের বর্তমানে দারফুরের প্রধান শহর, যা সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে RSF শহরটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাইছে।

রাজধানী খার্তুম থেকে ৮০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত শহরটিতে তারা নিয়মিত হামলা চালাচ্ছে। এছাড়াও, দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া দুটি শরণার্থী শিবিরেও তারা আক্রমণ করেছে।

এদিকে, সুদানের সিভিল ডিফেন্স বাহিনী জানিয়েছে, তারা পোর্ট সুদানে জ্বালানি ডিপো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। উল্লেখ্য, পোর্ট সুদানে সেনাবাহিনী সমর্থিত সরকারের সদর দপ্তর অবস্থিত এবং গত এক সপ্তাহ ধরে RSF এর ড্রোন হামলার শিকার হচ্ছে শহরটি।

সোমবার জ্বালানি ডিপোতে ড্রোন হামলার ফলে আগুন লাগে, যা পরবর্তীতে “জ্বালানি ভর্তি গুদামগুলোতে” ছড়িয়ে পরে। কর্তৃপক্ষ এই অঞ্চলে সম্ভাব্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

এর আগে, গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া ড্রোন হামলার কারণে লোহিত সাগর তীরবর্তী শহর পোর্ট সুদানকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এসব হামলায় বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, দেশের বৃহত্তম জ্বালানি ডিপো এবং শহরের প্রধান বিদ্যুৎ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার সুদানি কর্তৃপক্ষ ড্রোন হামলার জন্য RSF-কে দায়ী করেছে। যদিও RSF এখনো পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো জবাব দেয়নি।

পোর্ট সুদান সুদানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, এসব হামলা “দেশটিতে মানবিক চাহিদা বাড়াবে এবং সহায়তা কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলবে”।

অন্যদিকে, শনিবার রাতে সেনাবাহিনী পশ্চিম কর্ডোফান রাজ্যের এল-খুয়াই এবং পশ্চিম দারফুরে RSF-এর ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। গত সপ্তাহে RSF এল-খুয়াই দখল করে নেয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সুদানি সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্র বাহিনী RSF-এর সঙ্গে লড়াইয়ের পর এল-খুয়াইয়ের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করেছে।

এছাড়াও, রবিবার আতবারা শহরের বিমানবন্দরে ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে সুদানে সেনাবাহিনী এবং RSF-এর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। জাতিসংঘের মতে, এই গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *